বাংলা হান্ট ডেস্ক: জীবনে চলার পথে আসতে থাকা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে যাঁরা নিজের লক্ষ্যপূরণের প্রতি অবিচল থাকেন তাঁরাই পোঁছে যান সফলতার শিখরে। শুধু তাই নয়, তাঁদের এই অনন্য উত্তরণের কাহিনি (Success Story) উদ্বুদ্ধ করে অন্যান্যদেরকেও। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যিনি বর্তমানে প্রত্যেকের কাছেই এক বিরাট নজির তৈরি করেছেন। মূলত, আজ আমরা Intex কোম্পানির কো-ফাউন্ডার নরেন্দ্র বনসালের (Narendra Bansal) বিষয়ে আপনাদেরকে জানাবো। উল্লেখ্য যে, Intex Technologies ভারতের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলির মধ্যে অন্যতম একটি। এমতাবস্থায়, একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েও নরেন্দ্র কিভাবে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যপূরণ করলেন চলুন জেনে নিই সেই সম্পর্কে।
নরেন্দ্র বনসাল: প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে, নরেন্দ্র বনসালের বাবা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। নরেন্দ্র ১৯৬৩ সালে রাজস্থানের হনুমানগড়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় গ্রামেই। এরপর তাঁর পরিবার নেপালে চলে যায়। নরেন্দ্র নেপালেই দশম শ্রেণির পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তারপর ওই পরিবার ১৯৮০ সালে দিল্লিতে ফিরে আসে। এমতাবস্থায়, নরেন্দ্র দিল্লিতে তাঁর দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেন। তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে ব্যবসায়িক দক্ষতা অর্জন করেন।
কঠিন ছিল সফর: নরেন্দ্র একটা সময়ে দিল্লির লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরে আসা ভক্তদের ছবি তুলতেন। যেটি বিড়লা মন্দির নামে পরিচিত। সেই ছবিগুলি চাবির রিংয়ে আটকে বিক্রি করতেন তিনি। এই উপার্জনের ওপর ভর করেই তিনি পড়াশোনার খরচ চালাতেন। তারপর নরেন্দ্র ক্যাসেট বিক্রি শুরু করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি অডিও-ভিডিও ক্যাসেট বিক্রি করতেন তিনি। তবে, নরেন্দ্র ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। এই ইচ্ছা মাথায় নিয়ে তিনি দিল্লির নয়া বাজার ও চাঁদনি চকে কর্ডলেস ফোনের ব্যবসা শুরু করেন। এই কাজে ভালো লাভ হয়নি। তিনি তাই ওই কাজ বন্ধ করে দেন।
আরও পড়ুন: ২২৭ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ! একদিনেই আক্রান্ত হাজারের কাছাকাছি, ফের ভয় ধরাচ্ছে করোনা
কিভাবে হল শুরু: ১৯৯২ সালে নরেন্দ্র বনসাল তাঁর ভাইদের সাথে দিল্লির বিখ্যাত নেহেরু প্লেসে একটি দোকান ভাড়ায় নিয়ে কম্পিউটার অ্যাসেম্বেলের কাজ শুরু করেন। নরেন্দ্র তাইওয়ান ও হংকং থেকে সস্তায় পণ্য আনতেন এবং সেগুলিকে অ্যাসেম্বেল করে বিক্রি করতেন। তাঁর এই ব্যবসা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এইভাবে ১৯৯৩ সালে শুরু হয় International Impex নামের কোম্পানির। এদিকে ১৯৯৬ সালে তিনি আইটি পেরিফেরাল কোম্পানি Intex Technologies-এর ভিত্তি স্থাপন করেন। যেহেতু তাঁরা চিন ও কোরিয়া থেকে সরাসরি পণ্যের অর্ডার দিতেন সেহেতু তাঁদের পণ্য অন্যান্যদের তুলনায় সস্তা ছিল। Intex প্রথম বছরেই ৩০ লক্ষ টাকার বেশি লাভ করে। পরে স্পিকার, হোম থিয়েটার ও ডিভিডি প্লেয়ারের কাজও শুরু করা হয়।
আরও পড়ুন: যাত্রীদের জন্য সুখবর! শিয়ালদহ থেকে ছুটবে উত্তরবঙ্গগামী নতুন এক্সপ্রেস ট্রেন, সামনে এল সময়সূচি
জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মোবাইল: ১৯৯৭ সালে, Intex তার হোম থিয়েটার চালু করেছিল। যা তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এমতাবস্থায়, ২০০৫ সালে কোম্পানিটি তার নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট শুরু করে। পাশাপাশি, বাজারের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ২০০৭ সালে সংস্থাটি নিয়ে আসে সস্তায় ভালো মোবাইল ফোন। বাজারের অন্য সব কোম্পানির তুলনায় Intex-এর মোবাইলের দাম কম থাকায় মোবাইলগুলি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর এভাবেই নরেন্দ্র বনসালের কঠোর পরিশ্রম এবং দূরদৃষ্টির কারণে আজ Intex ৬,৫০০ কোটি টাকার একটি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।