বাংলাহান্ট ডেস্ক: নেপালের রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস রচনা করলেন সুশীলা কার্কি (Sushila Karki)। দেশের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও শপথ নিলেন তিনি। শুক্রবার রাতেই রাষ্ট্রপতি ভবন শীতল আবাসে রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেলের সামনে শপথ গ্রহণ করেন ৭২ বছরের এই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। এর মধ্য দিয়ে নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জায়গা করে নিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে সুশীলা কার্কি (Sushila Karki)
মঙ্গলবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ইস্তফার পর থেকেই দেশজুড়ে নতুন নেতৃত্বের দাবি জোরালো হচ্ছিল। প্রথম দিকে আন্দোলনকারীদের একাংশ কাঠমান্ডুর নির্দল মেয়র এবং জনপ্রিয় র্যাপার বছর পঁয়ত্রিশের বলেন্দ্র শাহ ওরফে বলেনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু বুধবার আন্দোলনের ভিতরেই নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। নেপালের ছাত্র-যুব নেতৃত্ব প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির (Sushila Karki) নাম সামনে আনে। তাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করার প্রস্তাব পাঠানো হলে তিনি শর্ত দেন, অন্তত ১,০০০ লিখিত স্বাক্ষর জমা দিতে হবে। কিন্তু প্রথমেই ২,৫০০-রও বেশি স্বাক্ষর এসে পৌঁছয় তাঁর সমর্থনে। এর পরেই আন্দোলনকারীরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নাম ঘোষণা করে। এমনকি, বলেনও সুশীলাকে সমর্থন জানান।
আরও পড়ুন:-ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ২১ লক্ষ পাকিস্তানি! মৃত্যু ৯০০ জনের, ঘোষণা ক্লাইমেট ইমার্জেন্সির
তবে বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি আবারও কিছুটা জটিল হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারীদের একাংশ প্রাক্তন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কুল মান ঘিসিঙের নাম প্রস্তাব করে। এই মতপার্থক্যের জেরে আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিভাজন প্রকট হয়ে ওঠে এবং কাঠমান্ডুর রাস্তায় তা প্রকাশ্যেও আসে। যদিও শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটির মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং শুক্রবার সুশীলার (Sushila Karki) নাম সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন পায়।
সুশীলা কার্কির (Sushila Karki) পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিল একজন শিক্ষিকা হিসেবে। পরে তিনি আইনের জগতে প্রবেশ করেন এবং ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে নিযুক্ত হন। ২০০৬ সালে সংবিধান খসড়া কমিটিরও সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে তাঁকে দেশের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারী, যিনি নিজেও নেপালের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ওলির নেতৃত্বাধীন সংবিধান পরিষদের সুপারিশেই সেই নিয়োগ হয়েছিল।
আরও পড়ুন:-চিন সীমান্তে ট্রেন চালাবে ভারত! ৩০,০০০ কোটি টাকা খরচে তৈরি হবে রেললাইন
দীর্ঘ কর্মজীবনে নির্ভীক, যোগ্য এবং সৎ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি গড়ে তুলেছেন সুশীলা (Sushila Karki)। নেপালের বিচারব্যবস্থায় তাঁর অবদান এবং ন্যায়ের প্রতি নিষ্ঠা তাঁকে দেশের এক অন্যতম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। সেই অভিজ্ঞতা এবং নৈতিক দৃঢ়তাই তাঁকে আন্দোলনকারীদের কাছে সর্বসম্মত পছন্দে পরিণত করেছে।
অতএব, নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। আন্দোলনের মধ্যেই জন্ম নেওয়া এই অন্তর্বর্তী সরকারকে নেতৃত্ব দেবেন সুশীলা কার্কি (Sushila Karki), যিনি একদিকে বিচারব্যবস্থার শীর্ষে ছিলেন এবং এখন দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলেন। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে তাঁর এই অভিষেককে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।