ভারতের হয়ে ব্রাজিলে গিয়েছিলেন বিশ্বকাপ খেলতে, এখন অটো চালিয়ে সংসার টানেন গোলরক্ষক

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে ফুটবল বিশ্বকাপের (Football World Cup) জ্বরে কাবু গোটা বিশ্ব। রোনাল্ডো-মেসি-নেইমারদের একটাও খেলা মিস করছেন না কেউই। পাশাপাশি প্রিয় দলের সাপোর্টে গলা ফাটাচ্ছেন সকলেই। এমতাবস্থায়, সর্বত্ৰ বিশ্বকাপের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়লেও আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন একজনের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যিনি একটা সময়ে ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলেও আজ পেটের দায়ে অটো চালিয়ে কোনোমতে দিন গুজরান করছেন।

হ্যাঁ, জেনে অবাক হয়ে গেলেও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আপাতত অটো চালিয়েই রোজগার করছেন উত্তর ২৪ পরগণার মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা অরিন্দম ঘোষাল। জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে FIFA আয়োজিত গৃহহীনদের (Homeless World Cup) বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয় ব্রাজিলে। এমতাবস্থায়, বাংলা থেকে অরিন্দমই একমাত্র সুযোগ পেয়েছিলেন এই বিশ্বকাপে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের তাবড় তাবড় সব খেলোয়াড়দের পায়ে দ্রুত গতিতে ছুটে আসা বল দক্ষতার সাথে সামলেছিলেন অরিন্দম।

কিন্তু, তারপর ১২ টা বছর কেটে গেলেও আজ অবশ্য সবটাই স্বপ্নের মত মনে হয় অরিন্দমের কাছে। সেই সময়ে ব্রাজিল থেকে খেলে আসার পর সকলের কাছেই পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার বাড়ির সামনে ভিড়ও জমাতেন অনেকেই। এমনকি, সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে একই মঞ্চে পেয়েছেন সংবর্ধনাও। অথচ এখন সেই দিনগুলিরই স্মৃতিচারণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তাঁর কাছে।

প্রতিভাবান এই খেলোয়াড় প্রবল অর্থ কষ্ট নিয়েই এখন জীবনসংগ্রামের ময়দানে লড়াই করে চলেছেন। তবে, কষ্টের মাঝেও এখনও সময় বের করে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন খেলা। যদিও, ২০১২ সালে খেলতে গিয়ে গুরুতর চোট পান অরিন্দম। ডান পায়ের মালাইচাকি ভেঙ্গে যাওয়ায় করতে হয় অপারেশনও। এমতাবস্থায়, দীর্ঘ আটমাস চলা ফেরার ক্ষমতাই ছিল না তাঁর। তবুও, পেটের টানে স্থানীয় খেলাগুলিতে যোগদান করে বাড়তি উপার্জন করতে হয় তাঁকে।

WhatsApp Image 2022 11 27 at 5.09.33 PM

এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, “ভারতীয় দলের হয়ে খেলে আসার পরেও আমি চাকরি পাইনি। মধ্যমগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের সাহায্যের পর একটি রুটে অটো চালাতে শুরু করি। ব্যাস তারপর থেকে সকালে অটো চালিয়ে বিকেলে যতটুকু সময় পাই সেটায় ফুটবল প্র্যাকটিস করি। সারা দেশে আমার মত হাজার হাজার খেলোয়াড় আছে, যারা শুধুমাত্র অভাবের কাছেই হেরে যাচ্ছে। এখন আমাদের খাবারটুকু পর্যন্ত ঠিক মতন জোটেনা।”

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর