বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারতের (India) কর্মসংস্থান নিয়ে ফের এক বড় ইতিবাচক খবর। নীতি আয়োগ মঙ্গলবার এক বিস্তৃত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে গত মাত্র ছয় বছরে ভারতের সেবা খাতে (Service Sector) তৈরি হয়েছে প্রায় চার কোটি (৪০ মিলিয়ন) নতুন কর্মসংস্থান। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, সেবা খাত এখন দেশের সবচেয়ে বড় চাকরিদাতা ক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ভারতের (India) সার্ভিস সেক্টরে কোটি কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ
“India’s (India) Services Sector: Insights from Employment Trends and State-Level Dynamics” রিপোর্টটিতে জানানো হয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ১৮.৮ কোটি মানুষ সরাসরি সেবা খাতে কাজ করছেন। এই খাত দেশের মোট অর্থনৈতিক মূল্যে (GVA) অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ প্রায় ৫৫ শতাংশ অবদান রাখছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, কোভিড-১৯ মহামারির সময় যখন বহু খাত ভেঙে পড়েছিল, তখনও এই খাত তার স্থিতিশীলতা ও কর্মসংস্থান রক্ষা করতে সক্ষম হয়।
আরও পড়ুন:ম্যাচ চলাকালীন ফুটবলারকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা! ভারতের এই স্টেডিয়ামে তুমুল চাঞ্চল্য
রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ‘কর্মসংস্থান স্থিতিস্থাপকতা’ (Employment Elasticity) বা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির অনুপাত বেড়েছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে ভারত (India) এই হার ০.৩৫ থেকে বেড়ে ০.৬৩ হয়েছে, যা নির্মাণ খাতের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। অর্থাৎ, এখন অর্থনীতি যত দ্রুত বাড়ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে।
তবে এই আশাব্যঞ্জক ছবির পাশাপাশি নীতি আয়োগ রিপোর্টে এক বড় বৈপরীত্যের (Paradox) দিকেও আলোকপাত করেছে। যদিও ভারতের (India) এক-তৃতীয়াংশ কর্মী সেবা খাতে নিযুক্ত, তবুও তাদের বেশিরভাগই কম উৎপাদনশীল (Low Productivity) এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক (Informal) কাজে যুক্ত। খুচরো ব্যবসা, পরিবহন বা ছোট পরিষেবা ক্ষেত্রগুলোতে চাকরির সুযোগ থাকলেও, সেখানে নেই স্থায়ী বেতন, সামাজিক সুরক্ষা বা চাকরির নিশ্চয়তা।অন্যদিকে, আইটি, ফাইন্যান্স, স্বাস্থ্যসেবা ও পেশাগত পরিষেবা—এই উচ্চমূল্যের খাতগুলো বিপুল অর্থনৈতিক মূল্য সৃষ্টি করলেও তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক মানুষকে কর্মসংস্থান দেয়। আয়োগ সতর্ক করেছে যে, যদি এই গঠনমূলক সংস্কার (Structural Reform) না আনা হয়, তাহলে ভারত নিম্নমানের চাকরির এক দুষ্টচক্রে আটকে যেতে পারে।

আরও পড়ুন:বৃষ্টি শুরু দক্ষিণবঙ্গে, আগামী সাতদিন কেমন থাকবে আবহাওয়া? আগাম পূর্বাভাস জেনে নিন
রিপোর্টে আরও তিনটি বড় চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, চাকরির মানের অবনতি—অর্থাৎ কম মজুরি ও অনিরাপদ কর্মসংস্থান। দ্বিতীয়ত, লিঙ্গ ও স্থানভিত্তিক বৈষম্য (Gender and Spatial Divide)—যেখানে নারী এবং গ্রামীণ যুবকেরা এখনও উচ্চমানের চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তৃতীয়ত, রাজ্যভিত্তিক বৈষম্য—নীতি আয়োগের অপর একটি রিপোর্ট “India’s (India) Services Sector: Insights from GVA Trends” অনুযায়ী, যে রাজ্যগুলিতে সেবা অর্থনীতি বেশি শক্তিশালী যেমন দিল্লি, চণ্ডীগড়, কর্নাটক, তেলঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, সেখানে মাথাপিছু আয়ও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
সব মিলিয়ে, নীতি আয়োগের এই রিপোর্ট একদিকে ভারতের (India) অর্থনীতির উজ্জ্বল দিক তুলে ধরছে—যেখানে সেবা খাত কোটি কোটি মানুষকে কর্মসংস্থান দিয়েছে, অন্যদিকে এটি সতর্ক বার্তাও দিচ্ছে যে, উন্নয়নের এই গতি টেকসই করতে হলে এখনই প্রয়োজন গঠনমূলক সংস্কার, অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের মানোন্নয়ন।













