ভগবান শিবের এই মন্দিরটি খোলা থাকে কেবলমাত্র মহা শিবরাত্রিতেই, গেলেই হয় ইচ্ছে পূরণ

বাংলা হান্ট ডেস্ক: হিন্দুদের কাছে মহা শিবরাত্রি একটি অন্যতম পবিত্র দিন। গভীর নিষ্ঠা এবং ভক্তি সহকারে শিবের আরাধনায় ব্রতী হন সকলেই। পাশাপাশি, আমাদের সমগ্র দেশজুড়েই মহাদেবের অনেক বিখ্যাত মন্দির রয়েছে যা ভক্তদের কাছে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে রয়েছে।

সারা বছর লক্ষাধিক ভক্ত এই মন্দিরগুলিতে যান। পাশাপাশি, এই মন্দিরগুলির কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। বর্তমান প্রতিবেদনেও আমরা ঠিক এইরকমই এক মন্দিরের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যা অত্যন্ত জনপ্রিয় ভক্তদের কাছে।

মধ্যপ্রদেশে মহাদেবের একটি মন্দির রয়েছে, যেটি শুধুমাত্র মহা শিবরাত্রির দিনেই খোলে। এই মন্দিরটি মধ্যপ্রদেশের রায়সেনে অবস্থিত। প্রাচীন সোমেশ্বর মহাদেব নামে পরিচিত এই মন্দিরটি একটি উঁচু পাহাড়ের উপর নির্মিত রয়েছে। কথিত আছে, এই মন্দিরটি দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। পাশাপাশি, বিশ্বাস করা হয় যে, এখানে যিনি সোমেশ্বর মহাদেবের দর্শন পান তিনি অত্যন্ত ভাগ্যবান।

জানা গিয়েছে যে, স্বাধীনতার পর রায়সেনের এই মন্দির এবং মসজিদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ মন্দিরে তালা লাগিয়ে দেয়। যার জেরে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত কেউ এই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি। তবে, ১৯৭৪ সালে, রায়সেন নগরের হিন্দু সমাজ ও সংগঠনগুলি মন্দিরের তালা খোলার জন্য আন্দোলন শুরু করে।

সেই সময় কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশচাঁদ শেঠি নিজে পাহাড়ে নির্মিত এই মন্দিরের তালা খুলে দিয়েছিলেন এবং মহা শিবরাত্রিতে এখানে একটি বড় মেলারও আয়োজন করেছিলেন। সেই থেকে শুধুমাত্র মহা শিবরাত্রিতে মন্দির খোলার প্রচলন রয়েছে।

মহা শিবরাত্রির দিন সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যে ৬ টা পর্যন্ত অর্থাৎ ১২ ঘণ্টার জন্য এই মন্দিরে মহাদেবের দর্শন পান ভক্তরা। প্রশাসনিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের উপস্থিতিতে সূর্যাস্তের পর মন্দিরটি বন্ধ করা হয়।

তবে, এই মন্দির বছরে একবার খুললেও সারা বছরই এখানে ভক্তদের সমাগম হয়। মন্দিরের দরজায় তালা ঝুললেও ভক্তরা ফটকের বাইরে থেকে সোমেশ্বরের পূজা করেন এবং মানতও চান। মানত করার সময়, উপস্থিত ভক্তরা মন্দিরের লোহার ফটকে কাপড় বেঁধে রাখেন, যা মানত পূরণের পরে খুলতে হয়।

পাশাপাশি, এই মন্দিরের একটি জনপ্রিয় বিষয় হল এখানে শিবলিঙ্গে সূর্যের রশ্মি পড়লে তা সোনার মতো চকচক করতে শুরু করে। সেই সাথে শ্রাবণ মাসে ভক্তদের জন্য বিশেষ আয়োজন করা হয়। শিবলিঙ্গের জলাভিষেকের জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। লোহার জাল লাগিয়ে দূর থেকে ভগবান শিবকে দর্শন করার যায় এবং একটি পাইপের মাধ্যমে শিবলিঙ্গে জলও দিতে পারেন ভক্তরা।

সোমেশ্বর মহাদেব মন্দিরে কিভাবে পৌঁছোবেন:

বিমানে: এই মন্দির থেকে নিকটবর্তী বিমানবন্দর হল ইন্দোরের দেবী অহল্যাবাই হোলকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যা ১৫৬ কিমি দূরে অবস্থিত। এটি মধ্যপ্রদেশের ব্যস্ততম বিমানবন্দর এবং দিল্লি, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই, আহমেদাবাদ, কলকাতা, বেঙ্গালরু, রায়পুর এবং জব্বলপুরের মতো শহরগুলির সাথে ভালো ভাবে সংযুক্ত রয়েছে।

Someswaragudi Dharwad 03

ট্রেনে: নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল উজ্জয়ন। যা ৯৮ কিমি দূরে অবস্থিত। মুম্বাই, দিল্লি, হায়দ্রাবাদ এবং ব্যাঙ্গালোরের মতো প্রধান শহরগুলির সাথে উজ্জয়ন রেলপথে ভালো ভাবে সংযুক্ত রয়েছে।

সড়ক পথে: এই মন্দিরে সড়ক পথে আসার জন্য ভক্তরা একটি ক্যাব ভাড়া করে বা উজ্জয়ন (৯৮ কিমি), ইন্দোর (১৫৬ কিমি), ভোপাল (২১৪ কিমি) এবং কোটা-রাজস্থান (২২৫ কিমি) থেকে বাস ধরে এখানে আসতে পারেন।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর