বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারত মূলত একটি কৃষিনির্ভর দেশ। দেশের প্রতিটি প্রান্তেই কোটি কোটি মানুষ কৃষিকাজকে নিজেদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তবে, এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কৃষিকার্যের মাধ্যমে ঠিকঠাক লাভের মুখ দেখতে পান না কৃষকরা। আবার কোনো সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলেও ফসল নষ্ট হয়ে গেলে সমস্যায় পড়তে হয় চাষীদের। এমতাবস্থায়, ভারতেরই এক গ্রামে কৃষকরা বছরে আয় করেন লক্ষ লক্ষ টাকা!
কথাটি শুনে নিশ্চিতরূপে অবাক গিয়ে গিয়েছেন? তবে, অদ্ভুত মনে হলেও এটা কিন্তু সম্পূর্ণরূপে সত্যি। এখানকার কৃষকদের বার্ষিক আয় শুনলে ভিরমি খাবেন সকলেই। শুধু তাই নয়, বাসিন্দাদের বিপুল এই উপার্জনের জেরে এই গ্রাম পেয়েছে অনন্য এক তকমাও। ভারতের পাশাপাশি সমগ্র এশিয়া মহাদেশের মধ্যেই সবচেয়ে ধনী গ্রামের শিরোপা পেয়েছে এই গ্রাম। এখন স্বাভাবিকভাবেই, প্রশ্ন উঠতে পারে এই গ্রামটির নাম কি? চলুন, বর্তমান প্রতিবেদনে এই গ্রামটি সম্পর্কেই বিস্তারিত তথ্য জেনে নিই।
আশ্চর্য এই গ্রামটি হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলা থেকে প্রায় ৯২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গ্রামটির নাম হল মাদাভাগ (Madavag)। এই গ্রামটিই এশিয়ার সবচেয়ে ধনী গ্রাম হিসেবে বিবেচিত হয়।
ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই গ্রামের বাসিন্দারা সাধারণত আপেলের চাষ করেন। এই গ্রামে কোনো শিল্পপতি বা নামী কোম্পানিতে কাজ করার কোনো লোক নেই। তাও এখানে প্রতি পরিবারের বার্ষিক আয় ৭০ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা। যেটি শুধুমাত্র আসে আপেলের চাষ করেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই গ্রাম থেকে এই বছরই প্রায় ৭ লক্ষ পেটি আপেল উৎপাদিত হবে। যার বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা।
এই গ্রামের কৃষকেরা চাষের প্রতি অত্যন্ত মনোযোগী। পাশাপাশি, তাঁরা একাধিক উৎকৃষ্ট প্রজাতির আপেল চাষ করেন। বাজারে এগুলির চাহিদা এবং দামও থাকে আকাশছোঁয়া। রয়্যাল অ্যাপল, রেড গোল্ড, গেইল গালার মতো আপেলও এখানে চাষ করা হয়। পাশাপাশি, এসব আপেলের গুণাগুণ এতই ভালো যে এগুলো দ্রুত নষ্ট হয় না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এখানে আপেল চাষের চিহ্ন পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু, ১৯৯০ সালে, একজন কৃষক পরীক্ষামূলক ভাবে এই চাষ শুরু করেছিলেন। সেখানেই মেলে সাফল্য। তারপর থেকেই সেখানকার বাসিন্দারা বিপুল হারে এই চাষ শুরু করেন।
এদিকে, মাঝে মাঝে শিলাবৃষ্টি এবং অতিরিক্ত তুষারপাতের কারণে কৃষকরা আপেল গাছে জাল দিয়ে রাখেন। এমনকি, সারারাত জেগে পাহারাও দেন তাঁরা। বর্তমানে মাদাভাগে প্রায় ২০০ প্রজাতির আপেল চাষ করা হয়। এমনকি, এগুলির চাহিদা এতটাই বেশি থাকে যে আগে থেকেই আপেলগুলির বুকিং হয়ে যায়। আর এই কারণেই এশিয়ার সবচেয়ে ধনী গ্রামের তালিকায় এক্কেবারে প্রথমে রয়েছে এই গ্রাম।