গরিব হলেও সৎ, রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া লক্ষ লক্ষ টাকা সঠিক মালিককে ফিরিয়ে দিলেন ট্যাক্সি ড্রাইভার

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে পাল্টাচ্ছে সমাজ, তার সাথে পাল্টে যাচ্ছে মানসিকতাও। এখন প্রায়শই বিভিন্ন ঘটনায় মানুষের সততা নিয়ে খুব সহজেই প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু, এমন কিছু ঘটনাও সামনে আসে যা নিঃসন্দেহে অবাক করে সবাইকে। দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করেও সম্প্রতি এক যুবক যে কান্ড ঘটিয়েছেন তাতে একবাক্যে তাঁকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন সবাই। শুধু তাই নয়, সততার পরিচয়ে দিয়ে বর্তমানে পাল্টে গিয়েছে তাঁর জীবনও।

রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পান ৩৮ লক্ষ টাকা:
জানা গিয়েছে যে, ১৯ বছর বয়সী ইমানুয়েল টুলো পশ্চিম আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়ার বাসিন্দা। মূলত, গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করা টুলোর রোজগার এতই কম ছিল যে প্রতিদিনের খরচও মেটাতে পারতেন না তিনি। এমতাবস্থায় একদিন তিনি রাস্তার পাশে একটি ব্যাগের ভেতরে সাক্ষাৎ গুপ্তধন খুঁজে পান। মূলত, সেই ব্যাগটি ভর্তি ছিল লাইবেরিয়ান এবং আমেরিকান নোটে। ভারতীয় মুদ্রায় যে পরিমানটা দাঁড়ায় প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকায়।

সততার অনন্য কীর্তি স্থাপন করেন ওই যুবক:
ইমানুয়েল চাইলে এই টাকা দিয়ে তাঁর জীবন বদলে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং সেই বিপুল অঙ্কের টাকা তিনি তাঁর জেঠিমাকে দিয়ে জানিয়েছিলেন যদি সরকারি রেডিওতে এই টাকার জন্য যদি কেউ আবেদন করেন তবে তিনি তাঁকে এগুলি ফেরত দিয়ে দেবেন।

এমতাবস্থায়, অনেকেই তাঁকে নিয়ে মজা করতে থাকেন। এমনকি, কেউ কেউ তাকে বলেছিলেন যে তিনি দারিদ্র্যের মধ্যে মারাও যেতে পারেন। কিন্তু সেইসব কথার পরোয়া না করে, ইমানুয়েল নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তবে, তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে, তাঁর এই মহান কাজের জন্য তিনি এমন একটি পুরস্কার পেতে চলেছেন, যা তাঁকে সারা বিশ্বে বিখ্যাত করে তুলবে।

রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে মিলল সততার পুরস্কার:
ইমানুয়েলের এই খবর পৌঁছে যায় দেশের প্রেসিডেন্ট জর্জ ভিয়ার কাছে। এরপর তাঁকে ভারতীয় মুদ্রায় ৮ লক্ষ টাকার পুরস্কার দেওয়ার পাশাপাশি ইমানুয়েলকে দেশের সবচেয়ে নামকরা স্কুলে ভর্তিও করিয়ে দেওয়া হয়। এখন তিনি তাঁর থেকে ৬ বছরের ছোট পড়ুয়াদের সাথে পড়াশোনা করছেন। এর সাথে, আমেরিকার একটি কলেজ ইমানুয়েলকে তাঁর স্নাতকস্তরে পড়াশোনার জন্য সম্পূর্ণ বৃত্তি প্রদান করেছে।

জানা গিয়েছে, ইমানুয়েল রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা এবং স্থানীয় একটি মিডিয়ার মালিকের কাছ থেকে নগদ টাকা পেয়েছেন যা দর্শক ও শ্রোতারা তাঁর জন্য পাঠিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, যার টাকা তিনি ফেরত দিয়েছেন তাঁর কাছ থেকেও এক লক্ষ টাকার বেশি পুরস্কার পেয়েছেন ইমানুয়েল।

এখন পড়াশোনা শেষ করার পালা:
সাধারণত লাইবেরিয়ার যুবকদের দারিদ্র্যের কারণে স্কুল ছেড়ে কাজ করতে হয়। ইমানুয়েলও তাঁদের মধ্যে একজন। জানা গিয়েছে, তিনি তাঁর বাবার মৃত্যুর পর ৯ বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। পাশাপাশি, পরিবারের খরচ মেটাতে তিনি মোটরবাইক এবং ট্যাক্সি চালানোর ব্যবসা শুরু করেন।

123939980 img 20220321 101825 355

এখন ইমানুয়েল তাঁর সততার কারণে আবার পড়াশুনা করতে পারছেন। স্কুলের গন্ডী পেরিয়ে ২৫ বছর বয়সে তিনি স্নাতক হবেন। এছাড়াও, তিনি দেশের অর্থনীতি পরিচালনায় অবদান রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং নিয়ে পড়তে চান।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর