কথায় আছে, ভোজনরসিক বাঙালি। তার মধ্যে আবার অনেক ব্যক্তিই আছেন যারা খাওয়াটাকে নিজের জীবনে ধ্যান জ্ঞান করে নেন। তন্ময় পাল তেমনি এক মানুষ। দুর্দান্ত ‘ফুডি’ হিসেবেই বন্ধু মহলে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু সেই খাওয়াই যে একদিন তার জীবনদীপ নিভিয়ে দিতে পারে এ কথা বোধহয় তন্ময় বাবুর পরিচিত মহলের সঙ্গীসাথী থেকে শুরু করে স্বয়ং তন্ময়বাবুও বুঝে উঠতে পারেননি।
যদিও চিকিৎসকদের দাবি শুধুমাত্র প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার কারণেই নয়, মাত্র অতিরিক্ত মদ্যপানও দায়ী তার এই অকাল মৃত্যুর পিছনে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের MSVP অমিয়কুমার বেরার কথায়, “অতিরিক্ত মদ্যপান ও আহারের কারণেই বছর পঁয়তাল্লিশের তন্ময় পালের মৃত্যু হয়েছে ।” ইতিমধ্যেই, গোটা বিষয়টি বেলডাঙা থানার পুলিশের তত্ত্বাবধানে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, বেলডাঙা থানার খিদিরপুর এলাকার বাসিন্দা তন্ময় পাল রথের দিন কার্যত ভুড়িভোজ করে ফেলেছিলেন। বন্ধুদের বহু বারণ সত্ত্বেও রথের মেলার পাঁপড়, জিলিপি, চপ সবই একসঙ্গে সবার করে ফেলেছিলেন। এতকিছু খাওয়ার পরেও ক্ষান্ত হননি খাদ্যরসিক তন্ময় বাবু। তারপর এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে পাকা কাঁঠালও খান। খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি আড্ডাবাজ তন্ময় বাবু রীতিমত নাচও করেন রথের শোভাযাত্রায়।
তারপর হঠাৎই প্রচন্ড বুকে যন্ত্রণা শুরু হলে কাতরাতে কাতরাতে লুটিয়ে পড়েন মাটিতেই। তন্ময়বাবুর অবস্থা খারাপ হতে দেখেই তাকে তড়িঘড়ি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সব পরিশ্রমকে ব্যর্থ করে মৃত্যু হয় তন্ময় পালের। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত খাবার খাওয়া ও মদ্যপানের জন্য তাঁর হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মহুলা-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১৮ নম্বর বুথের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন তন্ময় পাল। সম্প্রতি বহরমপুর জেলা আদালতে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে বলেও জানা গিয়েছে। শুক্রবার বহরমপুরে নিজের আইনজীবীর কাছে এই মামলার নিষ্পত্তির খবর শোনার পরই বহরমপুর থেকে মদ্যপান শুরু করেছিলেন বলে দাবি তার পরিচিতদের। এলাকায় ডাবুটে নেতা হিসেবে পরিচিত তন্ময় পালের উদ্দেশ্যে এলাকাবাসীরা অনেকেই বলছেন, “বড় খাদ্য প্রিয় মানুষ ছিলেন। খাবার পেলে সব ভুলে যেতেন।” যে খাদ্যপ্রিয় তন্ময় বাবু খাওয়া পেলে দিনরাত্রি ভুলে যেতেন সেই খাবার শেষ পর্যন্ত প্রাণ কাড়ল এই দাপুটে তৃণমূল নেতার।