বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কেউ বলছেন, “তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করলেও এখনো তিনি বিজেপির জার্সি ছেড়ে বেরোতে পারেননি”, আবার অনেকের কথায়, “রাজ্যের মন্ত্রিত্ব পদ পাওয়ার জন্যই এতদিন চুপ করে ছিলেন, বর্তমানে নিজের পুরনো ফর্মে ফিরে এসেছেন।” তিনি বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo), সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন বাবুল আর তার দুদিন কাটতে না কাটতেই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে আক্রমণ করে বসেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক, যার পরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। এমনকি এ বিতর্কে বাবুলের পাশে দাঁড়াতে অস্বীকার করে দিয়েছে তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস।
আসলে বিজেপিতে থাকাকালীন সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এবং একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্যের মাধ্যমে সর্বদাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতেন তৎকালীন বিজেপি সাংসদ বাবুল। পরবর্তীতে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানের পর বিগত কয়েক মাস ধরে বিতর্ক থেকে কয়েকশ মাইল দূরে ছিলেন তিনি। তবে সম্প্রতি মন্ত্রিত্ব পদ পেতেই তাঁর ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যাওয়াকে বঙ্গ রাজনীতিতে বেশ প্রাসঙ্গিক বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের পক্ষ থেকে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে ‘বঙ্গ বিভূষণ’ পুরস্কারে ভূষিত করার কথা ঘোষণা করা হলে তাঁর পরিবারের তরফ থেকে ‘অসম্মতি’ প্রকাশ করা হয়। আবার তার দুই সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই সিপিএমের দেওয়া মুজাফফর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি। এক্ষেত্রে নিজে উপস্থিত না হলেও তাঁর ‘প্রতিচী’ ট্রাস্টের ডিরেক্টরের মাধ্যমে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন অমর্ত্যবাবু আর পরবর্তীতে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বাধে বিপত্তি।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ হলেও সর্বদই বাম মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত অমর্ত্য সেন। এক্ষেত্রে অতীতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক সময় আক্রমণের পথে হাঁটতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বখ্যাত এই ব্যক্তিত্বকে পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দেয় বিজেপির বহু নেতা নেত্রীরাই আর সে কারণে গতকাল অমর্ত্য সেনকে লক্ষ্য করে বাবুল সুপ্রিয়র মন্তব্য বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। রাজ্য সরকারের পুরস্কার গ্রহণ না করা প্রসঙ্গে গতকাল বাবুল বলেন, “অমর্ত্য সেন একটি নির্দিষ্ট পথে রাজনীতি করে চলেন। আমরা যে রাজনীতি করি, তার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। তবে একটা কথা বলতে পারি যে, উনি হলেন একজন পর্যটক। বড় অর্থনীতিবিদ হওয়ার সত্ত্বেও উনি কখনোই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক রঙের বাইরে বেরোতে পারেননি।”
স্বাভাবিকভাবেই বাবুল সুপ্রিয়র এহেন মন্তব্যের পর বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “চারপাশে অর্জুন সিং এবং বিশ্বজিৎ দাসদের মতন নেতাদের দেখে গুলিয়ে ফেলেছেন যে, উনি বিজেপি নাকি তৃণমূল? সেই কারণেই এই মন্তব্য।” একইসঙ্গে বর্তমানে বাবুলের এহেন মন্তব্যের সমর্থন জানায়নি তৃণমূল কংগ্রেসও। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, “অমর্ত্য সেন হলেন বাংলার গর্ব। তাঁর সম্পর্কে যদি কেউ অসম্মানজনক মন্তব্য করে থাকে, তবে আমাদের দল তা সমর্থন করে না।”