পিকের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ হয়েছে, অসুবিধে হবে তৃণমূলের! বিস্ফোরক সৌগত রায়

বাংলাহান্ট ডেস্ক : পুরভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ঝামেলা এবং বিতর্ক তৃণমূলের নিত্যসঙ্গী। এর আগে এত দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যতই সীমাহীন অসন্তোষের মুখে খুব কমই পড়েছে রাজ্যের শাসকদল। এবার এই বিতর্কের তালিকায় নাম লেখালেন বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও। তাঁর দাবি, আইপ্যাকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করায় অসুবিধার মুখে পড়তে চলেছে তৃণমূল।

একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আইপ্যাকের কাজ দেখেছি। অসাধারণ। আমি ভারতের রাজনীতি ৬০ বছর ধরে দেখছি এত অর্গানাইজড সেট আপ আগে দেখিনি। যারা আইপ্যাকের হয়ে কাজ করে, সবাই উচ্চযোগ্যতা সম্পন্ন। আইআইটি, আইআইএম, ন্যাশনাল ল স্কুলের গ্র্যাজুয়েট, দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিকসের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, এরা এসেছে রাজনীতিতে। পয়সা কামানোর জন্য নয়, এরা এমনিই ৫ লক্ষ টাকা মাইনে পাবে। পাবলিক স্পেসে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে এসেছে। এরা খুব ভাল কাজ করেছে। এদের সার্ভে সিস্টেম, বিধানসভার প্রার্থীদের ব্যাপারে যা রিপোর্ট দিয়েছিল, সেই সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে ভাল ক্যান্ডিডেট হয়েছে। বিধানসভায় লিস্ট নিয়ে তো কোনও প্রবলেম হয়নি।’ তাঁর দাবি, ক্ষতি না হলেও আইপ্যাক সঙ্গে না থাকায় প্রভূত অসুবিধায় পড়তে হবে তৃণমূলকে।

এরই মধ্যে প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিক্ষোভ এবং দল ভাঙানোর অভিযোগে সৌগত রায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মদন মিত্র। নাম না করেই দমদমের সাংসদকে উদ্দেশ্য করে মদন মিত্র বলেন, ‘ এক নেতা ছিলেন, তিনি একসময় বলতেন মমতার বাবার ঠিক নেই। কতবার দল পাল্টেছেন ঠিক নেই। তারপরও বড় পদ পেয়েছেন তৃণমূলে। যে নেতা এককালে বলেছিলেন মমতার বাবার ঠিক নেই সেই নেতাই আজ দলে বড় পদ পেয়ে বসে আছেন। বটি কাবাব খাচ্ছেন আর দলে ভাঙন ধরাচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করব আপনি নিজে হস্তক্ষেপ করুন। নয় বার সাংসদ হয়েছেন। যখন যেখানে পারছেন চলে যাচ্ছেন। রাতে একটা দিনে আরেকটা। এসব নেতারা এভাবে থাকলে দলের ক্ষতি হচ্ছে।’ পুরভোটের প্রার্থী তালিকা সম্পর্কে মদনকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘ কামারহাটিতে প্রোমোটারি রাজ চলছে। প্রোমোটাররা চেয়ারপার্সনের ঘরে গিয়েই বসে আছেন। এক নেতা তিনি লোক পাঠাচ্ছেন। চেয়ারপার্সন আর কী করবে! একটা বাড়ির পাশে ব্যাঁকা বাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কীভাবে হল এরকমটা? খালি কোথা থেকে কীভাবে খাওয়া যায় সেই চিন্তা! আমি কোনওদিন বলিনি, ক্যবিনেটে পাশ হয়ে গিয়েছে, কামারহাটিতে কর্পোরেশন হবে, বাইরে এসে ধুতি পরা নেতা বিবৃতি দিচ্ছেন দমদম কর্পোরেশন হবে। কেন ওখানে মালকড়ি বেশি পাওয়া যাবে বলে? কাজুবাদাম, বিরিয়ানি, বটি কাবাব খেয়ে লুঙ্গি তুলে মালিশ করে প্রার্থীর নাম দিয়েছেন’।

এই প্রসঙ্গেও এবার সাফাই দিতে শোনা গেল সৌগত রায়কে। তিনি বলেন, ‘আমি আইপ্যাককে লিস্ট পাঠিয়েছিলাম। পরে জেলা সভাপতি পার্থ ভৌমিককে পাঠিয়েছিলাম। এই বিষয় নিয়ে আমি একবারই পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সুব্রত বক্সীর সঙ্গে কথা বলি। ওরা বলে লিস্ট ফাইনাল হয়ে গেছে। তখন আমি বলি তাহলে আমার সাজেশনের তো আর দরকার নেই। পরে বিধায়কদের অনুরোধে দু-চারটে এসএমএস করেছি শুধু প্রার্থী বদলের ব্যাপারে।’ এর বেশি তালিকা নিয়ে তাঁর কিছু বলার নেই বলেই সাফ জানান দমদমের সাংসদ। একই সঙ্গে কামারহাটি প্রসঙ্গেও তিনি জানান, উত্তর ২৪ পরগনা কখনই তাঁর ছিল না, এখনও নেই।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রার্থী তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে অতিসক্রিয়তা, পাসওয়ার্ড বিতর্ক, ভুল প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ইত্যাদি অভিযোগে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক কেই কাঠগড়ায় তুলেছে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ব্যাপারে একমত দলের সঙ্গে। কিন্তু এহেন দাব-বিবাদের জেরে খোদ আইপ্যাক কর্তা মুখ্যমন্ত্রীকে মেসেজ করে জানান, বাংলা, মেঘালয় এবং ত্রিপুরায় তৃণমূলের সঙ্গে কাজ করবে না আইপ্যাক। এর উত্তরে শুধুমাত্র একটি ‘থ্যাঙ্কিউ’ লিখে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। এর পর থেকেই তৃণমূল পিকে বিচ্ছেদ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হলেও সরাসরি কোনো মন্তব্যই করেননি শাসকদলের কোনো নেতা। কিন্তু এবার তৃণমূল সাংসদের আইপ্যাকের হয়েই মাঠে নামায় যে আবার তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি তা বলাই বাহুল্য।

Avatar
Katha Bhattacharyya

সম্পর্কিত খবর