বাংলাহান্ট ডেস্ক : প্রেম করে বিয়ে। ৩১ বছর ধরে দিব্যি চলছিল ঘর সংসার। মাঝে এসে বাগড়া দিল পুরভোট। পুরভোটের ভুল প্রার্থী তালিকার জেরেই বিচ্ছেদ ঘটতে চলেছে তৃণমূল কর্মী স্বামী-স্ত্রীর। দক্ষিণ দমদম পুরসভায় ভোটে টিকিট না পাওয়ায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা শুরু হলেও শেষ মেষ সেই ঝামেলা গড়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ অবধি। শেষমেষ অভিমানে নির্দল প্রার্থী হলেন স্ত্রী।
সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী সুরজিৎ এবং রীতা রায়চৌধুরী দক্ষিণ দমদম পুরসভার সক্রিয় তৃণমূল নেতা নেত্রী। পুরভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময় প্রথমে ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করা হয় রীতা রায়চৌধুরীকে। কিন্তু প্রথম প্রার্থী তালিকা বাতিল করে নতুন তালিকা প্রকাশ করে দল। এই তালিকায় দেখা যায় বাদ গিয়েছে স্ত্রীর নাম। বদলে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী করা হয়েছে স্বামী সুরজিৎ রায়চৌধুরীকে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে টুম্পা দাস নামে অন্য এক নেত্রীকে প্রার্থী করে তৃণমূল।
এই ঘটনার পর থেকে রায়চৌধুরী বাড়িতে চরমে ওঠে বিবাদ। ঝামেলা এতদূর গড়ায় যে বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে চলে যান রীতাদেবী। স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পরই তাঁকে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিস পাঠিয়েছেন সুরজিৎ। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এখনও চোখ ছলছল করে উঠছে তাঁর। সেই ভেজা চোখেই তিনি বলেন, ‘দল প্রথমে টিকিট দেবে বলেও পরে বাতিল করেছে। তারপত থেকেই চূড়ান্ত অশান্তি শুরু হয়েছে সংসারে। কিন্তু শেষমেষ সিদ্ধান্ত নিই দলই আমার কাছে আগে। সেই কারণেই বিবাহবিচ্ছেদের নোটিস পাঠিয়েছি। রীতা ইতিমধ্যেই আমাকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে।’
এরপর নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম। ৩১ বছরের বিবাহিত জীবন। একটি মেয়েও রয়েছে আমাদের। ৪৫ বছর ধরে রাজনীতি করছি। ২০১৫ সাল থেকে কাউন্সিলর। ৮ বছর ধরে যুব সভাপতি। তার পরও আমার এই পরিণতি।’
আপাতত নির্দল হয়েই ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে লড়ছেন রীতা। জোড়া পাতা চিহ্নে মনোনয়ন জমাও দিয়ে ফেলেছেন। তাঁর প্রতীক জোড়া পাতায় ভরে গিয়েছে ৯ নম্বর ওয়ার্ড। কিন্তু পুরো এলাকায় কোথাও দেখা নেই তৃণমূলের পতাকা তো দূর একটাও দেওয়াল লিখন অবধি চোখে পড়ে না। এমনকি তাঁর ব্যানারে লেখা ‘প্রচারে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল স্তরের কর্মীবৃন্দ’। এহেন প্রচার কার্যতই ভ্রুকুঞ্চনে বাধ্য করেছে পর্যবেক্ষকদের। নিজেদের প্রার্থী ফেলে কেন নির্দলের প্রচারে নেমেছে তৃণমূল উঠছে সেই প্রশ্ন।
প্রসঙ্গত এর আগেই রাজনৈতিক কারণে বিচ্ছেদ ঘটেছে বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এবং তাঁর স্ত্রী সুজাতা খাঁর। সুজাতা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরই তাঁকে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিস পাঠান সৌমিত্র। পুরো ব্যাপারটি নিয়েই যে চোখের জল সহ ঘটনার জলও গড়িয়েছিল অনেক দূর তা বলাই বাহুল্য।