বাংলা হান্ট ডেস্ক: নিজের প্রতি ভরসা এবং লক্ষ্যপূরণের জন্য জেদ থাকলেই যে সফলতা (Success) অর্জন করা সম্ভব তা ফের একবার প্রমাণিত হল। একাধিক প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে দিয়েই আজ সফলতার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছেন এক যুবক। এক্কেবারে শূন্য থেকে শুরু করেই নিজের কর্মদক্ষতায় তিনি বর্তমানে সবার কাছে হয়ে উঠেছেন “আইকন”।
বর্তমান প্ৰতিবেদনে আমরা যাঁর প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব তাঁর নাম হল ভগবান গিরি। এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মা, বাবা, ভাইবোনের খুশির সংসারে ছিলনা কোনো অসুবিধে। কিন্তু, হঠাৎই ঘটে ছন্দপতন। ভগবানের বাবা অকালেই পড়ি দেন না ফেরার দেশে। আর তার সাথে সাথে তাঁদের পরিবারে নেমে আসে অন্ধকারের ছায়াও। এমনকি, একটা সময়ে খাওয়ারও জুটতনা তাঁদের। পড়াশোনা তো দূর, ছিলনা পায়ে পরার জুতোটুকুও।
বাবার চিকিৎসার কারণে ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে গোটা পরিবারই। যে কারণে ভগবান পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়াশোনাও করতে পারেননি। এমতাবস্থায়, ভগবান প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস তাঁদের গ্রামের এক ব্যক্তির হয়ে কাজ করতে শুরু করেন। একবার সেই মালিকের এক বন্ধু তাঁদের গ্রামে এলে ভগবান তাঁর সাথে পুণে চলে যান।
সেখানে পৌঁছে ভগবান মালিকের বন্ধুর দোকানে কাজ করতে শুরু করেন। পাশাপাশি, তিনি ওই সময়ে ব্যবসায়িক উপায় সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছিলেন। একটা সময়ে তিনি সবজিও বিক্রি করতেন। এমনকি, দীপাবলির জন্য তার একটি দোকান ছিল। সেটিও তিনি সামলাতেন। এভাবেই তিনি মোট সাতটিরও বেশি দোকানে কাজ করেছেন। তারপর তিনি একটি ভুট্টার স্টল চালানো শুরু করেন।
প্রায় ২ থেকে ৩ মাস ধরে তিনি এটি চালিয়ে লক্ষ্য করেন প্রতি মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। তিনি নিজের ওপর যথেষ্ট বিশ্বাসী ছিলেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন ভগবান। তারপর সেই আড্ডা থেকেই একদিন উঠে আসে যে, ডিম ভুর্জি বানিয়ে বিক্রি করলে তাতে অনেক লাভ করা যায়। কিন্তু, ভগবান ডিমের গন্ধ সহ্য করতে পারেন নি। কারণ, তাঁরা গোসাভি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। যদিও, ধীরে ধীরে এক বন্ধুর কাছ থেকে ডিম ভুর্জি বানানো শিখে নেন তিনি।
আরও পড়ুন: মোবাইল থেকে থাকতেন দূরে! একই পরিবারে বাবা-দাদার পর ভাইবোন হলেন জজ, এভাবে করলেন স্বপ্নপূরণ
এরপর তিনি একটি ঠ্যালা গাড়ির স্টল ভাড়া করে এই কাজ শুরু করেছিলেন। প্রতিদিন ৪০ টাকার বিনিময়ে এই স্টলটি চালাতে থাকেন তিনি। প্রথম দিন তাঁর মোট আয় হয় ৭০ টাকা। ধীরে ধীরে ভগবান নিজেও সেখানে বিভিন্ন ধরণের পদ তৈরি করেন। এগুলি পছন্দও করতে শুরু করেন সবাই। এক সময়ে তাঁর ব্যবসায় লাভও বাড়তে থাকে। তারপর ভগবান নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন।
সেই কাজে শেষপর্যন্ত সফলও হন তিনি। এখন ভগবান ফ্র্যাঞ্চাইজিও অফার করেন ইচ্ছুকদের। পাশাপাশি, প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টি পদ পাওয়া যায় তাঁর আউটলেট গুলিতে। পুণেতেই ১২ টি আউটলেট স্থাপন করেছেন ভগবান। পাশাপাশি, তাঁর “ফুড ট্রাক”ও রয়েছে। বর্তমানে ভগবানের এই ব্যবসায় বছর শেষে কয়েক লক্ষ টাকার টার্নওভার আসছে। শুধুমাত্র নিজের প্রতি ভরসা এবং বিশ্বাসকে পাথেয় করে এগিয়ে গিয়েই ভগবান পেয়েছেন সাফল্য। যা নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত করবে দেশের নবীন প্রজন্মকে।