‘অগ্নিপথ’ বিক্ষোভে জ্বলছে বিহার! পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর, আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল ট্রেনে

বাংলাহান্ট ডেস্ক : মঙ্গলবার ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পরিকল্পনা ‘অগ্নিপথ’-এর কথা ঘোষণা করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তারপর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছিলেন সেনাবাহিনীতে চাকরি করার স্বপ্ন দেখা বহু মানুষ। সেই অসন্তোষ থেকেই তীব্র বিক্ষোভ শুরু হল বিহারে। রেল ও সড়ক পথ অবরোধ করেছে বিক্ষোভকারীরা। ট্রেন ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় প্রতিবাদীরা।

রেলপথে চলছে সেনায় যোগ দিতে আগ্রহীদের পুশ-আপ। রেলের কোচে আগুন! বৃহস্পতিবার ‘অগ্নিপথ’, অর্থাৎ, সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগের নয়া পদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হিংস্র রূপ নিল বিহারে। ভভুয়া রোড রেলস্টেশন, আরাহ রেলস্টেশন, জেহানাবাদ, নওয়াদা, সহর্স, চাপরা – গোটা বিহারই যেন অগ্নিপথে পরিণত হল। জায়গায় জায়গায় চলল প্রতিবাদীদের তাণ্ডব। পাল্টা লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ল পুলিশও।

বুধবারই ‘অগ্নিপথ’ নিয়ে বিহারের মুজফ্ফরপুর এবং বক্সার জেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন চাকরি প্রার্থীরা। নয়া নিয়োগ পদ্ধতিতে, সশস্ত্র বাহিনীতে অফিসার ব়্যাঙ্কের নিচে চার বছরের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে। বিক্ষোভকারীদের প্রশ্ন, ‘চার বছর পর আমরা কী করব?’ ভভুয়া রোড রেলস্টেশনে এদিন বিক্ষোভকারীরা লাঠি দিয়ে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের কাচের জানালা ভেঙে দেয়। ট্রেনটির একটি বগিতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। আরাহ রেলস্টেশনে, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে দেখা গিয়েছে বিক্ষোভকারীদের। রেললাইনের উপর বিভিন্ন আসবাবপত্র ছুড়ে সেগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

জানা গিয়েছে, গত দু’দিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে বিহার। একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস চালাচ্ছে পুলিশ। পালটা পুলিশের দিকে পাথর ছোঁড়ে প্রতিবাদীরা। জাহানাবাদ এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে পুলিশ বন্দুক তাক করে পুলিশ। রেললাইনে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন প্রতিবাদীরা। অবরোধ তুলতে লাঠি নিয়ে বিক্ষোভকারীদের তাড়া করে পুলিশ। প্রতিবাদীদের লক্ষ্য করে পুলিশকেও পাল্টা পাথরও ছুড়তে দেখা গিয়েছে। এমনকী, বিক্ষোভকারীদের দিকে বন্দুকও তাক করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।এমনকি রেল লাইনের উপরেই ডন বৈঠক করতে শুরু করেন অনেকে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁরা কত পরিশ্রম করেছেন, সেই কথা সকলকে বোঝাতে চান তাঁরা

নওয়াদা জেলায়, রাস্তায়-রেলপথে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। নওয়াদা রেলস্টেশনে রেলের প্রচুর সম্পত্তির ক্ষতি করেছে প্রতিবাদীরা, এমনই অভিযোগ। সহর্স, চাপড়াতেও একইরকম হিংসার ছবি দেখা গিয়েছে। ভাঙচুর চালানো হয়েছে সরকারি বাসে। প্রতিবেশী রাজ্য উত্তরপ্রদেশেরও বেশ কিছু অংশে ছড়িয়ে পড়েছে অগ্নিপথ বিরোধী বিক্ষোভ, এমনটাই জানা গিয়েছে। হিংস্র আন্দোলনকারীদের অনেককেই ‘ভারতীয় সেনাপ্রেমী’ লেখা ব্যানার তুলে ধরতে দেখা গিয়েছে।

কিন্তু, কেন এই বিক্ষোভ? ‘অগ্নিপথ’ বা ‘ট্যুর অফ ডিউটি’ প্রকল্পে চার বছরের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে জওয়ানদের নিয়োগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই চুক্তি ভিত্তিক জওয়ানরা গ্র্যাচুইটি বা পেনশনের সুবিধা পাবেন না। মেয়াদের চার বছরের ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা করে মাসিক বেতন এবং ভাতা পাবেন তাঁরা। রয়েছে চিকিৎসা ও জীবনবীমার সুবিধাও। অবসরের সময় এককালীন অর্থও দেওয়া হবে। কিন্তু, প্রতিবাদীরা এই নিয়োগ পদ্ধতি মেনে নিতে পারছেন না। চার বছরের চাকরির পর তাঁরা কী করবেন, এই প্রশ্নেরই উত্তর চাইছেন তাঁরা।

indian army in loc

অগ্নিপথ প্রকল্পের অধীনেই ‘অগ্নিবীর’ অর্থাৎ, ৪ বছর পর যারা সশস্ত্র বাহিনী থেকে অবসর নিতে বাধ্য হবেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর জন্য তাদের ডিপ্লোমা বা ক্রেডিট দেওয়া হতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে তাদের কাজ পেতে সাহায্য করবে। তাছাড়া, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বেশ কয়েকটি রাজ্যে, রাজ্য পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রেও অগ্নিবীরদের অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দাবি, চার বছর পর বসিয়ে দেওয়া ৭৫ শতাংশ সেনার সরকারের অন্যান্য কাজে বা বেসরকারি অফিসে চাকরি পেতে অসুবিধা হবে না। কারণ, সেনায় কাজ করার সুবাদে তাঁরা কর্মক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।


Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর