বাংলাহান্ট ডেস্ক : বেফাঁস মন্তব্যের জেরে এবার বিতর্কের মুখে উদয়ন গুহ। দিনহাটায় তৃণনূলের কর্মীসভা থেকে তাঁর ‘দুয়ারে প্রহার’ প্রকল্প রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে রাজ্যে। এই সুযোগেই ঘাসফুল শিবিরকে লক্ষ্য করে আবারও তোপ বিজেপির।
রবিবার দিনহাটা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কর্মীসভা চলছিল তৃণমূলের। সামনের পুরো ভোটের প্রচার সংক্রান্ত আলোচনার জন্যই আয়োজন করা হয়েছিল সভাটি। আর এখানেই তৃণমূল কর্মীদের বাড়ি গিয়ে পিটিয়ে আসার হুমকি দিতে শোনা যায় উদয়ন গুহকে। এই কর্মীসভায় তিনি বলেন, ‘রাজ্য সরকার মায়েদের জন্য লক্ষ্মীর ভান্ডার দিয়েছে। মায়েদের তো কিছু বলা যায় না, তবে পুরুষদের জন্য বেসরকারিভাবে পুরসভার নারায়ণের ভান্ডার রয়েছে। নারায়ণ ভান্ডারের সুযোগ নিয়ে কেউ যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে, তাহলে তাদের জন্য নতুন একটি প্রকল্প চালু করা হবে হবে। তা হল দুয়ারে প্রহার। সেটা যেন মাথায় থাকে।’ তাঁর এই মন্তব্যের পরই রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয় বাংলার রাজ্য রাজনীতিতে।
যদিও পুরো ব্যাপারটিতে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে চেয়ে সাফাই দিতেও দেখা যায় উদয়ন গুহকে। তিনি জানান, তাঁর কর্মীদের তিনি বলেছেন। এতে বিতর্কের কিছুই নেই। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘ আমি আমার কর্মীদের বলেছি। তাছাড়া সেভাবে তো কিছু বলিনি। অনেকেই নারায়ণ ভান্ডারের টাকা নিয়েছে। নারায়ণ ভাণ্ডার বলে সরকারি কোনো প্রকল্প নেই। কিন্তু সরকারি সুযোগ সুবিধা, পুরসভার সুযোগ সুবিধা সবই কর্মীদের দিয়েছি। আমি কর্মীদের বলেছি যাঁরা বছরের পর বছর দলের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন, পুরসভার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন, পুরভোটের সময় তাঁরা যদি বিশ্বাসঘাতকতা করেন তবে তাঁদের জন্য আরেকটি প্রকল্প চালু হতে পারে, সেটা হচ্ছে দুয়ারে প্রহার। আমি আমার কর্মীদের বলেছি এবং সেটা স্পষ্টও করে দিয়েছিলাম। এর মধ্যে তো বাইরের লোকের কিছু নেই’।
উদয়ন গুহর এই সাফাইয়ের প্রেক্ষিতে তোপ দেগেছেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘ এই সহজ, সরল সত্যটা ঠিক তৃণমূলী লাইনে মানুষের সামনে উপস্থিত করার জন্য উদয়ন গুহকে অনেক ধন্যবাদ। এটাই তৃণমূল কংগ্রেস। ১১ বছর রাজত্ব করার পরেও তারা পশ্চিমবঙ্গ সরকার হয়ে উঠতে পারেনি, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার হয়ে থেকে গিয়েছে। তারা মনে করে এখানে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে কোনও মুখ্যমন্ত্রী নেই, যিনি আছেন, তিনি রাজতন্ত্রের প্রতিভূ হয়ে আছেন। তাই যাঁরা যাঁরাই তাঁর অনুদান নেবেন, কৃপাধন্য হবেন, তাঁদের ভোট দিতে হবে। তাঁদের আনুগত্য দেখাতে হবে। এখানে আনুগত্য-ই প্রথম ও আনুগত্য-ই শেষ। এভাবেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভায় ভোট হয়েছে। সমস্ত ভোটেই তৃণমূলীরা দরজায় দরজায় গিয়ে বলেন, যদি আমাদের ভোট না দাও, তাহলে সরকারি সমস্ত প্রকল্প থেকে তোমরা বঞ্চিত হবে।’
প্রসঙ্গত, পুরভোটের আগেই দলের অন্দরে কোন্দলের জেরে বেসামাল তৃণমূল। সামনে এসেছে একের পর এক গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ঘটনা। এরপর ভোটের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেতার এহেন বেফাঁস মন্তব্যে কার্যতই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে ঘাসফুল শিবিরে। যদিও এই ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়াই এখনও দেয়নি রাজ্যের শাসকদল।