বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বছর শেষের আগেই মঙ্গলবার রাজ্যের প্রাইমারি স্কুলগুলির (Primary School) বার্ষিক ছুটির ক্যালেন্ডার প্রকাশ করে দারুন উপহার দিয়েছিল রাজ্য (West Bengal) সরকার। কিন্তু ওই তালিকা প্রকাশে আসতেই দেখা যায় হাই স্কুলের সাথে বৈষম্য দূর করতে প্রাইমারিতে পুজোর ছুটি টানা ২৫ দিন করা হলেও একই রয়েছে গরমের ছুটি তালিকা। অর্থাৎ খাতায়-কলমে এবারও গরমের ছুটি ৯ দিনই ধার্য করা হয়েছে।
ছুটির তালিকা বদলাবে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) সরকার?
এরপর বুধবার প্রকাশ্যে এসেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ছুটির তালিকা। সেখানে দেখা গিয়েছে আগামী বছরেই মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের হাই স্কুলগুলিতে গরমের ছুটির (Summer Vacation) সংখ্যা রয়েছে ১১ দিন। যা গত বছর ছিল ১০ দিন। অর্থাৎ এখানেও ছুটির সংখ্যা কার্যত বাড়ছে না বললেই চলে। তবে আগামী বছর হাই স্কুল গুলোতেও পুজোর ছুটি (Puja Vacation) থাকবে ২৫ দিন। তবে প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের তিনটি শিক্ষা পর্ষদ অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের গরমের ছুটি দিনক্ষণ নিয়ে।
কারণ এই তিনটি শিক্ষা পর্ষদের ছুটির দিন তিন রকম। একদিকে যখন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের গরমের ছুটি চলবে ২ মে থেকে ১২’ই মে পর্যন্ত অন্যদিকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ছাত্রছাত্রীরা গরমের ছুটি পাবেন ১২ই মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত। অথচ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের গরমের ছুটি চলবে ২৮ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত। একই রাজ্যের তিন দপ্তর গরমের ছুটি কেন আলাদা সময়ে দিচ্ছে? কিসের ভিত্তিতে একই রাজ্যের (West Bengal) পড়ুয়ারা আলাদা সময়ে গরমের ছুটি পাচ্ছেন? তা নিয়ে শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন তুলছেন।
প্রসঙ্গত বিগত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের থেকে অনেক আগেই সরকারি স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি পড়ে যাচ্ছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ শুরু হতেই স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি ঘোষণা করে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। চলতি বছরেই স্কুল বন্ধ ছিল প্রায় ৪৫ দিন। অথচ খাতায় কলমে গরমের ছুটি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র ৯ থেকে ১১ দিন।
এই অতিরিক্ত ছুটি বার্ষিক ৬৫ দিন ছুটির সঙ্গে যুক্ত হলেও তার উল্লেখ করা হচ্ছে না সরকারি ছুটির তালিকায়। তাই প্রশ্ন উঠছে অতিরিক্ত ছুটি দেওয়া হলেও বার্ষিক ছুটির ক্যালেন্ডারে কেন ৬৫ দিন স্কুল বন্ধ থাকবে বলা হচ্ছে? সরকারিভাবেই অতিরিক্ত ছুটির কথা উল্লেখ করা হচ্ছে না কেন? শুধু তাই নয়, মাঝপথে এই অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করার ফলে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে স্কুলগুলির পঠন পাঠনের ওপরেও।
আরও পড়ুন: নবান্নের পাশে রাজনৈতিক অবস্থান কর্মসূচিতে ফুলস্টপ! যা নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট
আগে থেকে ছুটির দিনক্ষণ ঘোষণা করা থাকলে শিক্ষক শিক্ষিকাদের পঠন-পাঠনের পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়। কিন্তু এইভাবে আচমকাই অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করে দেওয়ার ফলে নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলের পঠন পাঠন শেষ করা হয়ে করা যাচ্ছে না। তাই এই অতিরিক্ত ছুটির দিন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুজোর ছুটি কমিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়ে শিক্ষা দপ্তরে চিঠি লিখেছিলেন বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা। তাদের দাবি ছিল গ্রীষ্ম প্রধান রাজ্যে (West Bengal) গরমের ছুটি বাড়িয়ে পুজোর ছুটি কমানো হোক। তাহলে পরিকল্পনা মাফিক পঠন-পাঠন শেষ করতে সুবিধা হবে।
তাছাড়া যে সময় টানা ২৫ দিন পূজোর ছুটির কারণে স্কুল বন্ধ থাকে সেই সময় অর্থাৎ সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে অতটাও গরম থাকে না। আবার শীতও পড়ে না। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস করতে কোনো অসুবিধা হয় না। অন্যদিকে শিক্ষা অনুরাগী ঐক্ষা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, গরমের ছুটি যদি বাড়ানো সম্ভব না হয় তাহলে খুব গরমে ভোরের দিকে স্কুল করানো হোক। তাছাড়া তিনি বলেছেন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে প্রজাতন্ত্র দিবস স্বাধীনতা দিবসের মতো ছুটির দিনে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে তা পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই ওই দিনগুলিকেও ছুটি হিসাবে না ধরে কাজের দিন হিসাবে ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই দাবিও মানা হয়নি।