বাংলাহান্ট ডেস্ক: এবার একটি চাঞ্চল্যকর বিষয় সামনে এসেছে। এমনিতেই সম্প্রতি হাওয়াইয়ের (Hawaii) মাউই-এর জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনায় তাপের পরিমাণ এতটাই ভয়ানক ছিল যে এর ফলে অন্তত ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি, আমেরিকার ইতিহাসে এই দাবানল সবথেকে ভয়াবহ হয়ে গিয়েছে। আগুনের তীব্রতা এতটাই মারাত্মক ছিল যে এটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থল এবং একসময় হাওয়াই রাজ্যের রাজধানী তথা ঐতিহাসিক শহর লাহাইনাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে, উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার বাট কাউন্টির জঙ্গলে একই রকম আগুন লেগেছিল। ওই ঘটনায় যাতে ৮৫ জন প্রাণ হারান। এমতাবস্থায়, ওই ঘটনাটি “ক্যাম্প ফায়ার” নামে পরিচিত হয়েছে।
একইভাবে, আমেরিকার প্রতিবেশী দেশ কানাডাও ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ওই অগ্নিকাণ্ডে কানাডার লক্ষ লক্ষ একর জমি জুড়ে থাকা বন ধ্বংস হয়ে যায় এবং এক লক্ষেরও বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে হয়। এই আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে আমেরিকার নিউইয়র্কের আকাশের রং কমলা হয়ে গিয়েছিল। আর এইভাবেই বর্তমানে প্রায়শই জঙ্গলে আগুন লাগার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি বাড়লে কি হবে: শুধু তাই নয়, আমরা প্রতি বছর আরও গরমের মুখোমুখি হতে হতে বিষয়টিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। এদিকে, ইতিমধ্যেই NASA-র নেতৃত্বাধীন সাম্প্রতিক এক গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে, যদি বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে থাকে, সেক্ষেত্রে সারা বিশ্বের মানুষ একসাথে বেশ কয়েকটি জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনার এবং সেগুলির প্রভাবের সম্মুখীন হতে পারে।
এছাড়াও, ওই গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, এর ফলে বিশ্বের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ প্রতি বছর তীব্র গরমের সম্মুখীন হতে পারে। সমীক্ষাটি আরও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, এটি অ্যামাজনের মতো এলাকাকে বিপজ্জনকভাবে উচ্চ তাপমাত্রা এবং খরার দিকে নিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি দাবানলের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরও পড়ুন: মাটির নীচ থেকে আসছিল ভয়ানক আওয়াজ! মেঝে খুঁড়তেই বেরিয়ে এল ‘ওরা”! হাড় হিম ভাইরাল ভিডিও
বিশ্বজুড়ে মানুষের উপর প্রভাব: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, এই গবেষণাটি পরিচালনা করার জন্য, বিজ্ঞানীরা NASA Goddard Institute for Space Studies দ্বারা তৈরি মডেল সহ বিশ্বের ৩৫ টি জলবায়ু মডেলের দ্বারা প্রস্তুত জলবায়ু পূর্বাভাসের একটি সেট ব্যবহার করেছেন। এই মডেলগুলি কাপলড মডেল ইন্টারকম্প্যারিসন প্রজেক্ট (CMIP)-এর অংশ। যেটি আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় জলবায়ু গোষ্ঠীগুলিকে ঐতিহাসিক, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তনগুলি বুঝতে সাহায্য করার জন্য জলবায়ুর পূর্বাভাস প্রদান করে।
আরও পড়ুন: প্রতি কেজির দাম ১,০০০ টাকা! রয়েছে প্রচুর চাহিদাও, এই চাষ শুরু করলে হয়ে যাবেন মালামাল
এদিকে, ইন্ডিয়া টুডের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, ওই পেপারের প্রথম লেখক তাজিন পার্ক ব্যাখ্যা করেছেন, “আমরা অধ্যয়ন করতে চেয়েছিলাম কিভাবে পরিবেশের এই দিকগুলি পরিবর্তিত হতে পারে এবং কিভাবে এটির সম্মিলিত প্রভাব সারা বিশ্বের মানুষকে প্রভাবিত করবে তা জানার জন্য।”
জলবায়ুর পরিবর্তন কম করার জন্য জরুরী প্রয়োজন: এই গবেষণাটি বিশেষভাবে তাপমাত্রা, মানুষের শরীরের উপর আর্দ্রতা এবং আবহাওয়ার সম্মিলিত প্রভাবের উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে তাপমাত্রা, বৃষ্টি, আর্দ্রতা এবং বাতাস। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চল আরও বেশি তাপ অনুভব করবে। পাশাপাশি বিষুব রেখার কাছাকাছি দেশগুলিতেও গরমের দিন বাড়বে। সামগ্রিকভাবে এই গবেষণার ফলাফলগুলি জলবায়ুর পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাবগুলি কমাতে বিশ্বব্যাপী সঠিক পদক্ষেপের জরুরী প্রয়োজনের দিকেই নির্দেশ করেছে।