বাংলাহান্ট ডেস্কঃ গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে লাদাখে (Ladakh) ক্রমশই ভারত-চিন উত্তেজনা বাড়ছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে টহলদারির নামে শুধু ভারতের (india) সীমান্তের মধ্যে ঢুকে পড়া নয়, প্যাঙ্গং লেকের কাছে সেনা মোতায়েন রাতারাতি বাড়িয়ে দিয়েছে চিন। গালওয়ান উপত্যকায় অন্তত একশ তাঁবু দেখা গিয়েছে পিপলস লিবারেশন আর্মির। এরই মধ্যে চাঞ্চল্যকর উপগ্রহ চিত্র এ বার পাওয়া গেল। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্যাঙ্গং লেকের মাত্র ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে পুরোদস্তুর বিমানঘাঁটি গড়ে তুলছে চিন। শুধু তা নয়, টারম্যাকে সম্ভবত জে-১১ বা জে-১৬ যুদ্ধ বিমানও রয়েছে।
লাদাখে প্যাঙ্গং লেকের ২০০ কিলোমিটার দূরে তিব্বতের ‘গাড়ি কুনসা’য় দশ বছর আগেই একটি বিমানবন্দর বানিয়েছে। বেজিং তখন জানিয়েছিল, অসামরিক বিমান পরিবহণের জন্যই ওই বিমানবন্দর তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, গত এক মাসে ওই বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের কাজ রাতারাতি বেড়ে গিয়েছে। এবং সেখানে রীতিমতো একটি বিমানঘাঁটি তথা এয়ারবেস বানিয়ে ফেলেছে চিন। শুধু তা নয়, উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, গাড়ি কুনসার টারম্যাকে যুদ্ধবিমানও দাঁড় করিয়ে রেখেছে চিনা বায়ুসেনা।
ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, ওয়েস্টার্ন সেক্টর বা সিকিম সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ অতিক্রম করেছে বলে যদি কেউ দাবি করে তা সঠিক নয়। ভারতীয় সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখার এপারেই ছিল। বরং সম্প্রতি চিনা সেনা বারংবার ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে ঢুকে পড়ে স্বাভাবিক টহলদারির প্রক্রিয়ায় গোল বাধাচ্ছে।
ভারত-চিন সীমান্ত বিবাদ
ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় জমিতে স্পষ্ট কোনও সীমা নেই। সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্তকে মোটামুটি ভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ওয়েস্টার্ন, মিডল ও ইস্টার্ন। ওয়েস্টার্ন সেক্টরে ‘জনসন লাইন’ জম্মু কাশ্মীরের লাদাখ ও আকসাই চিনের মধ্যে সীমারেখা টেনে রেখে। মিডল সেক্টরে রয়েছে উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল। যেখানে মোটামুটি ভাবে কোনও বিবাদ নেই। আর ইস্টার্ন সেক্টরে চিন দাবি করে অরুনাচল প্রদেশ দক্ষিণ তিব্বতের অংশ। সেই দাবি ধারাবাহিক ভাবে খণ্ডন করে চলেছে নয়াদিল্লি।
গালওয়ানে গন্ডগোল
কিন্তু গত কিছুদিন ধরে লাদাখে যা চলছে, তাকে আর শুধু সাধারণ বলে লঘু করে দেখলে ভুল হবে বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা। প্রাক্তন সেনা অফিসারদের অনেকেরই একই মত। বরং তাঁরা মনে করছেন, গোটা ঘটনার মধ্যে বেজিংয়ের একটা প্যাটার্ন রয়েছে। এটা স্থানীয় কোনও মিলিটারি কমান্ডারের অতিশয় অ্যাডভেঞ্চারিজম নয়। বরং হতে পারে সুচিন্তিত পদক্ষেপ। কেন না গালওয়ান উপত্যকায় যা হচ্ছে তা খুবই চিন্তাজনক। লাদাখের এই উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারত ও চিনের সেনার মধ্যে কখনও বিবাদ হয়নি।
ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি
সীমান্তে চিনা সেনার এই অতিসক্রিয়তা এমন সময়ে দেখা যাচ্ছে, যখন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ক্রমশ একঘরে হচ্ছে বেজিং। আমেরিকার সঙ্গে চিনের শীত যুদ্ধের সম্ভাবনা প্রতিদিনই একটু একটু করে জমাট বাঁধছে। এমনকি চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই তো রবিবার স্পষ্ট অভিযোগ করে বলেছেন, আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক শক্তি বেজিংয় ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ককে শীত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শুধু মুখে এ কথা বলা নয়, বিশ্ব জুড়ে তাদের প্রচার যন্ত্রকে সক্রিয় করে তুলেছে বেজিং।
কূটনীতিকদের মতে, ঠিক কী কারণে চিন লাদাখে সেনা মোতায়েন বাড়াচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। কিছু ধারণা ও আন্দাজ লাগানো হচ্ছে ঠিকই। তবে এও ঠিক, কেবলমাত্র সীমান্তে টহলদারি নিয়ে ঝগড়া বা বচসার কারণে তা করা হচ্ছে ভাবলে ডাহা বোকামি হবে। কারণ, চুমার বা ডোকালামে যে বিবাদ ঘটেছিল তার স্পষ্ট কারণ ছিল। সড়ক নির্মাণ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে বিবাদ তৈরি হয়েছিল তখন।