বাংলাহান্ট ডেস্ক : কিডনি বিক্রি করতে যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন করলেন এক যুবক। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমানের টিকরহারে। শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে বিশেষভাবে সক্ষম যুবকের কথা বলতেও অসুবিধা হয়। সমস্যা যতই থাকুক, পড়াশোনা থেকে কর্মক্ষেত্র কোন জায়গাতেই প্রতিবন্ধকতা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। কিন্তু কোভিডকালীন লকডাউন পরিস্থিতির পর চাকরি খুইয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিলেন বর্ধমানের যুবক সম্রাট গোস্বামী।
জানা গিয়েছে, স্নাতক পরীক্ষায় পাশ করার পর একটি সংস্থায় ডাটা এন্ট্রির কাজ করছেন সম্রাট। স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে তিন জনের সংসার মোটামুটি ভাবে চলে যেত তার। কিন্তু লকডাউন উলটপালট করে দিয়েছে সব। লকডাউনে কাজ হারাবার পর আর কাজ পাননি। যতটুকু সঞ্চয় ছিল তা নিঃশেষ হয়েছে অনেক আগে। বাধ্য হয়ে স্ত্রী অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে যান। যতটুকু বেতন পান তা দিয়ে কোন রকমের বাড়িভাড়া টুকু জোগাড় হয়, কিন্তু তার বাইরে নিজের সন্তানের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেওয়াই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে গোস্বামী পরিবারের। তাই বাধ্য হয়ে নিজের কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সম্রাট।
বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন সম্রাট। এরপর একটি ইনস্টিটিউট থেকে tally শিখে বেসরকারি সংস্থায় ডাটা এন্ট্রি কাজ করতেন তিনি। লকডাউনে সেই কাজটুকু চলে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে স্ত্রী মনীষা অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ নিতে বাধ্য হন। দুটি বাড়ি থেকে কাজ করে তিনি মাইনে পান ২৫০০ টাকা, কিন্তু বাড়ি ভাড়া দিতে তাদের চলে যায় ৩০০০ টাকা। এমন অবস্থায় কোনো রকম আশার আলো না দেখতে পেয়ে তিনি কিডনি বিক্রি করার পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোন রকম সাহায্য মেলেনা জানিয়ে সম্রাট বলেছেন, “লকডাউনে চাকরি চলে গেছে। তারপর আর চাকরি পাইনি। বাধ্য হয়ে কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুনেছি কিডনি বিক্রি করলে মোটা টাকা পাওয়া যায়।” স্বামীর কিডনি বিক্রির কথা জানেন স্ত্রী মনীষাও। মনীষা বলেন, “সংসারের অভাব। বাচ্চাটাকে দুমুঠো ভাত দিতে পারি না, তাই স্বামীর কিডনি বিক্রির কথায় আপত্তি করি নি”।
সূত্রের খবর, শুধু সম্রাট নয়, অভাবের তাড়নায় একসময় তার বোন বনশ্রী দেবনাথও কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বনশ্রীদেবী বলেন “এক সময় আমি আর আমার স্বামীও কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু চাইলেই তো হবে না সঠিক ক্রেতা পাওয়া চাই। ভুয়ো দালালের খপ্পরে পড়ায় আর এগোইনি”।জানা গিয়েছে, তাঁদের বাবা স্থানীয় পুরসভায় চাকরি করতেন। এঘটনা জানতে পেরে বর্ধমানের স্থানীয় জেলাশাসক জানিয়েছেন, “আমরা যদি লিখিত কোনো অভিযোগ পাই, তাহলে খতিয়ে দেখবো”।