বাংলা হান্ট ডেস্ক: আশঙ্কা ছিলই। এবার সেই আশঙ্কাকে সত্যি করেই উৎসবের মরশুমে ডলার (US Dollar) প্রতি টাকার (Indian Rupee) দামে ফের একবার সর্বকালীন পতন ঘটল। জানা গিয়েছে, এবার মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দাম ৮২ টাকার নিচে নেমে গেছে। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই এটি সর্বকালের সর্বনিম্ন স্তরও স্পর্শ করেছে। মার্কিন মুদ্রার উত্থান এবং ব্যবসায়ীদের ঝুঁকি না নেওয়ার প্রবণতার কারণে ৭ অক্টোবর অর্থাৎ শুক্রবারে বাজার খুলতেই মার্কিন ডলারের নিরিখে টাকার দর ১৬ পয়সা কমে গিয়ে সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায় ৮২.৩৩ টাকায় নেমে এসেছে।
জানা গিয়েছে, আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে, ডলারের বিপরীতে টাকা প্রথমে ৮২.১৯ টাকার স্তরে ছিল। যদিও, পরে তা ৮২.৩৩ টাকায় নেমে আসে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মত ভারতীয় মুদ্রা ডলারের বিপরীতে ৮২ টাকার নিচে নেমে এসেছিল।
মার্কিন ডলার শক্তিশালী হয়েছে: এই প্রসঙ্গে মতিলাল ওসওয়াল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ফরেক্স ও বুলিয়ন বিশ্লেষক গৌরাঙ্গ সোমাইয়া বলেন, “মার্কিন ডলার শক্তিশালী হওয়ার কারণে টাকার পতন ঘটেছে। প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিষেবাগুলির পিএমআই এবং ব্যক্তিগত চাকরিগুলির প্রত্যাশার চেয়ে ভাল ডেটা ডলারকে শক্তিশালী করেছে।” এদিকে, গ্লোবাল অয়েল বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার ০.১০ শতাংশ কমে ব্যারেল প্রতি ৯৪.৩৩ ডলারে পৌঁছেছে। ঠিক এই আবহে টাকার পতন একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। শুধু তাই নয়, টাকার দামে পতনের জেরে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হয়েছে।
দাম বাড়বে ভোজ্য তেলের: ডলার শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি টাকার পতনের জেরে অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়তে পারে। কারণ, ভারত ভোজ্য তেলের প্রায় ৬০ শতাংশ আমদানি করে। যেটি কেনা হয় ডলারে।
পেট্রোল ডিজেলেরও দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা: জানিয়ে রাখি যে, ভারত ৮০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। পাশাপাশি, এর জন্য ডলারে অর্থ প্রদান করতে হয়। এমতাবস্থায়, ডলার দামি হলে অপরিশোধিত তেলও দামি হবে। এর ফলে পেট্রোল ডিজেলের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে।
ওষুধ এবং ইলেকট্রনিক পণ্য: ভারত প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক পণ্য এবং যন্ত্রপাতি সহ প্রচুর পরিমানে ওষুধ আমদানি করে। পাশাপাশি, বেশিরভাগ মোবাইল এবং গ্যাজেটও বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। তাই, টাকার এভাবে পতন ঘটতে থাকলে ওষুধ এবং ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম বৃদ্ধি হবে।
বিদেশে থাকা পড়ুয়াদের খরচ বাড়বে: বিদেশে অধ্যয়নরত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের কলেজ ফি, হোস্টেল, খাবার এবং পরিবহণের খরচের জন্য ডলারে অর্থ প্রদান করতে হয়। এমতাবস্থায় টাকার দর পতনের কারণে ওই শিক্ষার্থীদের আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হবে।
কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে: উল্লেখ্য যে, ভারতীয় কোম্পানিগুলি সস্তায় বিদেশ থেকে বিপুল পরিমানে ঋণ সংগ্রহ করে। কিন্তু, টাকার দাম কমে গেলে ভারতীয় কোম্পানিগুলির জন্য বিদেশ থেকে ঋণ সংগ্রহ করা ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। যার ফলে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা স্থগিত হয় যায়। সর্বোপরি, এতে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগও কমে যেতে পারে।