বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: মারা গেলেন ১৯৫৬ সালে ভারতের হয়ে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করা ফুটবল দলের শেষ জীবিত সদস্য তুলসীদাস বলরাম (Tulsidas Balaram)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে দুপুর ২.০৫ নাগাদ তার মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্য জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। দুই বছর আগে বাথরুমে পড়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। সেবার যদিও সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরেছিলেন।
আদতে হায়দরাবাদের বাসিন্দা তুলসীদাস, কলকাতায় ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) হয়ে খেলতে এসে এই শহরেরই স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান। উত্তরপাড়ার একটি দুই কামরার ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন তিনি। বাড়ি থেকে বেশি বের হতেন না বা বলা হলো বেরোনোর উপায় ছিল না শারীরিক অবস্থার কারণে। শেষ দিকে তার নিয়মিত খোঁজ নেওয়ার মতোও বেশি মানুষ ছিলেন না।
প্রসঙ্গত, পাঁচ ও ছয়ের দশকের এই ফুটবলারের অপর দুই ছায়াসঙ্গী চুনী ও পিকে ২০২০ সালে কয়েকমাসের ব্যবধানে মারা যান। তাঁদের তিনজনকে সে সময় ‘ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর’ বলে চিনতো লোকজন। এবার তিনি চলে যাওয়ার বাংলার ময়দানের একটা দীর্ঘ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো এমনটা বলাই যায়। তার খেলা যারা দেখেছেন তারা প্রত্যেকেই তাকে অত্যন্ত ভদ্র এবং ঠান্ডা মাথার ফুটবলার হিসেবে চিনতেন। গোল করার পরও কোনদিনও অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেন না। নিজের স্বভাবের কারণেই অনেকের প্রিয় পাত্র ছিলেন নিজের খেলোয়ার জীবনে।
ভারতীয় ফুটবলের তিন সবচেয়ে বড় নামের মধ্যে অন্যতম একজনকে হারানোয় শোকের ছায়া নেমে এসেছে সেই প্রজন্মের ময়দান ভক্তদের যারা চুনি পিকে এবং তুলসীদাসের খেলা নিয়মিত দেখতেন। তারকা ফুটবলার নিজের শেষ জীবনে ঠিকঠাক কথা বলতেও পারতেন না। ইস্টবেঙ্গল ও ভারতের জার্সিতে ইতিহাস তৈরি করা ও একাধিক ট্রফি জেতা ফুটবলারের জীবনের শেষটা সুবিধার হয়নি।
প্রসঙ্গত, তুলসীদাস যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, তার দেওয়ালে তিনি নিজেই লিখে রেখেছিলেন, তিনি মারা গেলে তাঁর দেহ যেন দাহ না করা হয়, তিনি দেহ দান করতে চান। এখন তার দেহ নিয়ে কি করা হবে সেই খবর অবশ্যই প্রকাশ্যে আসেনি। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে খেললেও কোনও ইস্টবেঙ্গল কর্তা তার খোঁজ রাখেননি শেষ বয়সে। শুধুমাত্র ভাইঝি এবং ভাইপোরা দেখাশোনা করতেন। নিজের প্রিয় ক্লাবের ওপর অনেকটা অভিমান নিয়েই হয়তো চলে গেলেন তিনি।