বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের দেশে একসময় মাইক্রোম্যাক্স (Micromax), কার্বন (Karbonn) এবং লাভা-র (Lava) মতো দেশীয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলির আধিপত্য বজায় ছিল। কিন্তু একের পর এক চিনা কোম্পানি বাজারে আসার পর এই দেশীয় কোম্পানিগুলি প্রতিযোগিতার বাইরে চলে যায়। তবে, এবার ফের আশার আলো দেখা গিয়েছে ওইসব কোম্পানিগুলির জন্য। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই স্মার্টফোনের বাজারে এন্ট্রি লেভেলে রীতিমতো ঝড় তুলতে প্রস্তুত কোম্পানিগুলি।
এর কারণ হল, বর্তমানে চিনা কোম্পানিগুলি বিভিন্ন প্রশ্নের এবং তদন্তের সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়াও, তারা ৮,০০০ টাকার কম দামের মোবাইলের সেগমেন্ট থেকে প্রায় বেরিয়ে এসেছে। এমতাবস্থায়, বর্তমানে গ্রাহকদের কাছে সস্তার স্মার্টফোনের বাজারে খুব বেশি বিকল্প নেই। এমন পরিস্থিতিতে, দেশীয় ব্র্যান্ডগুলির এন্ট্রি লেভেল বিভাগে তাদের জায়গা তৈরি করার ভালো সুযোগ রয়েছে।
ইতিমধ্যেই এই প্রসঙ্গে কার্বন ব্র্যান্ডের মালিক জৈন গ্রুপের এমডি প্রদীপ জৈন জানিয়েছেন যে, দেশে কার্বন স্মার্টফোন লঞ্চ করার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কার্বন ৪,৯৯৯ টাকা দামের একটি স্মার্টফোন লঞ্চ করতে চলেছে। এদিকে, মাইক্রোম্যাক্সও ৫,৯৯৯ টাকা দামের একটি স্মার্টফোন লঞ্চ করার পরিকল্পনা করছে। তবে, কোম্পানিটি টেলিকম অপারেটরদের সাথে আলোচনা করছে যাতে এটি ৪,৯৯৯ টাকায় লঞ্চ করা যায়। এদিকে, লাভা-ও ১০,০০০ টাকার নিচে একটি 5G স্মার্টফোন নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এক শতাংশেরও কম অংশীদারিত্ব: জৈন জানিয়েছেন যে ১০,০০০ টাকার সাব-সেগমেন্টে একটি শূন্যতা রয়েছে এবং সরকারও চায় দেশীয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলি ফিরে আসুক। অন্তত আগামী তিন বছরের জন্য 4G এখানে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং কার্বন এই সেগমেন্টেই ফোকাস করবে। পাশাপাশি, লাভা-র প্রেসিডেন্ট এবং বিজনেস হেড সুনীল রায়না জানিয়েছেন, গত এক বছর ধরে কোম্পানিটি পূর্ণ শক্তি দিয়ে স্মার্টফোন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানিটি প্রোডাক্টস, সফটওয়্যার এবং আফটার-সেলস সার্ভিসে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।
এছাড়াও, তিনি আরও জানিয়েছেন গত বছর, তার আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ গ্রোথের সম্মুখীন হয়েছে ওই সংস্থা। এদিকে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে সংস্থাটি তিনগুণ গ্রোথ পরিলক্ষিত করেছে। পাশাপাশি, মাইক্রোম্যাক্সের এক আধিকারিক জানিয়েছেন যে, সংস্থাটি কোয়ালিটি প্রোডাক্টস লঞ্চ করতে চায়। এদিকে, ভারতীয় কোম্পানিগুলি চিনা কোম্পানিগুলির মতো ২৫,০০০ টাকার পর্যন্ত মডেল লঞ্চ করার পরিকল্পনা করছে।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, গত মার্চে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে ভারতের স্মার্টফোন বাজারের এক শতাংশেরও কম অংশীদারিত্ব রয়েছে ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলির কাছে। ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে এগুলির ৪৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব ছিল। কিন্তু তারপরে চিনা কোম্পানিগুলির প্রভাবে তারা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ে। বর্তমানে ভারতীয় বাজারে স্যামসাংয়ের ২০ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। পাশাপাশি, চাইনিজ ব্র্যান্ড Vivo-র ১৭ শতাংশ, Xiaomi-র ১৬ শতাংশ, Oppo-র ১২ শতাংশ এবং Realme-র ৯ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। এদিক, আগামী দিনে, লাভা এবং জিও ১০,০০০ টাকার সাব-সেগমেন্টে তাদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
চীনা কোম্পানিগুলির উপর রয়েছে নজর: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, বর্তমানে সরকার দেশীয় ব্র্যান্ডের প্রচার বেশি করে করতে চাইছে। এদিকে, দেশীয় ব্র্যান্ডের একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, সরকার এই কোম্পানিগুলিকে সমান গুরুত্ব দিতে চায়। এর আগে ভারতীয় কোম্পানিগুলি ডিজাইনিং এবং ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের জন্য চিনের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এখন তারা দেশেই প্রোডাক্টস উৎপাদন করছে। ১০,০০০ টাকার নিচের স্মার্টফোনের বাজার কিছুদিন ধরে সংকুচিত হচ্ছে। মার্চে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে তা নেমে এসেছে মাত্র ৯ শতাংশে। এদিকে, ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্তে বিরোধের কারণে চিনা কোম্পানিগুলির ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে সরকার। এমনকি, সেগুলির বিরুদ্ধে বিভিন্ন তদন্তও চলছে।