বাংলাহান্ট ডেস্ক : আজকের এই প্রতিবেদনটি আমাদের রাজ্যের শিক্ষকদের একটি করুন দিক তুলে ধরছে। এই শিক্ষকরা পার্শ্বশিক্ষক হিসেবে পরিচিত রাজ্যে। নিয়মিত সরকারি শিক্ষকদের মতো এনারা ক্লাস নেন, সামলে থাকেন স্কুলের অতিরিক্ত দায়িত্ব। তবে এই পার্শ্বশিক্ষকদের মাসিক বেতন এতটাই কম যে আয়ের জন্য এনাদের বেছে নিতে হয়েছে অতিরিক্ত পেশা।
কোনও শিক্ষক মাছ বিক্রি করেন, আবার কোনও শিক্ষক চালান টোটো। এই পার্শ্বশিক্ষকরা দাবি করেছেন, নিয়মিত শিক্ষকদের মতো তাদের ক্লাস নিতে হয় স্কুলে। তাছাড়াও স্কুল ছুটদের চিহ্নিত করে ক্লাসে ফিরিয়ে আনাও তাদের অন্যতম একটি দায়িত্ব। কিন্তু বেতনের অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে তাতে সংসার চালানো সম্ভব না।
আরোও পড়ুন : বছর শুরুতেই LPG গ্রাহকদের জন্য বড় সুখবর! আজ থেকে দাম কমল গ্যাস সিলিন্ডারের
ডাংনা পশ্চিমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পার্শ্ব শিক্ষকের কাজ করেন নদিয়া জেলার চাপড়ার বাসিন্দা আহাদ আলি মণ্ডল। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি টোটো চালান। এই শিক্ষক জানিয়েছেন সকালে যাওয়ার সময় তিনি বেরিয়ে পড়েন টোটো নিয়ে। স্কুল শেষ করে আবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চালান টোটো।
আরোও পড়ুন : বছর শুরুতেই ফের ভিজবে বাংলা? বৃষ্টির সম্ভাবনা দক্ষিণবঙ্গের ৫ জেলায়, ভয়ঙ্কর রিপোর্ট IMD-র
আহাদের কথায়, “মা, বাবা, স্ত্রী এবং মেয়ে রয়েছেন বাড়িতে। অসুস্থ স্ত্রী। মায়ের রয়েছে হৃদরোগের সমস্যা। চতুর্থ শ্রেণীর পড়ুয়া কন্যা। প্রচুর খরচ সংসার চালাতে। ৯০০০ টাকা মতো বেতন পাই স্কুল থেকে। এতে সংসার চালানো কি সম্ভব?” একটা সময় প্রাইভেট টিউশনি করতে চেয়েছিলেন আহাদ। তবে বাড়িতে পড়িয়ে বিশেষ আয় হয় না। তাই বাধ্য হয়ে টোটো চালান তিনি।
সমীরণ সর্দার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মথুরাপুরের ফটকিএড়ের পাড় অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্বশিক্ষক। সমীরণ রোজ সকালে দু’ঘণ্টা করে মাছ বিক্রি করেন স্থানীয় ঘোড়াদল বাজারে। তারপর দোকান বন্ধ করে চলে যান স্কুলে। সমীরণ জানিয়েছেন,”বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা রয়েছে। মেয়ের টিউশনি খরচ রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে মাছ বিক্রি করতে হয়।”
পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্যমঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ জানাচ্ছেন, “স্কুল ছুটদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের স্থান উপরের দিকে। তবে এই কাজের কৃতিত্ব যাদের তাদের বেতন অত্যন্ত কম। পার্শ্ব শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ করার জন্য সম্প্রতি বিহার সরকার জানিয়েছে তিনটি পরীক্ষা নেওয়া হবে। যেকোনো একটিতে পাশ করলে স্থায়ী শিক্ষক হওয়া যাবে। তাহলে আমাদের এখানে কেন সেই ব্যবস্থা চালু করা হবে না?”
শিক্ষা দফতরের এক কর্তা অবশ্য বলছেন পার্শ্বশিক্ষকদের প্রতি শিক্ষা দপ্তর যথেষ্ট মানবিক। পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অবসরের সময়ে পার্শ্বশিক্ষকদের তিন লক্ষ টাকা গ্রাচুইটি ও ৩ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির।