বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কাকু আর তার ‘বিখ্যাত’ কণ্ঠস্বর। এই এক ইস্যু নিয়ে কতই না গল্প। দিন যায়, মাস যায়, কেটে যায় কত সময়, অবশেষে দীর্ঘ সাড়ে চার মাস ধরা গেল কাকুর কণ্ঠস্বর। বহু টানাপোড়েনের পর ইডির (Enforcement Directorate) চাপে মুখ খুলতে হল সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (Sujoy krishna Bhadra) ওরফে কালীঘাটের কাকুকে (Kalighater Kaku)। তবে এই কণ্ঠস্বর নিয়ে কাকু চাপে নাকি উল্টে চাপ বাড়ল কেন্দ্রীয় সংস্থার ওপর?
পাশের বাড়ির ঝামেলা হোক বা ভারতের চন্দ্রযান উৎক্ষেপণ যেকোনো বিষয় নিয়ে বাঙালির জ্ঞান দেওয়ার শেষ নেই। এবার ইডিকেও জ্ঞান দিতে ছাড়ল না রাজ্যবাসী। হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশের পর বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে রাতারাতি কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করেছে ইডি। আর ওদিকে কাকুর সেই ‘অমূল্য’ কণ্ঠস্বরের নমুনা আর কি কি ভাবে, কোন সহজ উপায়ে সংগ্রহ করা যেত এই নিয়ে বন্যার জলের মতো পরামর্শ এসেই চলেছে ইডির ইমেলে। আর যা নিয়ে রীতিমতো হাপিয়ে উঠেছে ইডি।
ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। তখন কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা পেতে মরিয়া ইডি। সেই নমুনা সংগ্রহ করতে সোজা এসএসকেএম এও পৌঁছে যায় ইডি। তবে সেখানে গিয়েই অফিসাররা জানতে পারে তার আগের রাতেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় ‘কালীঘাটের কাকু’কে তড়িঘড়ি তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। তাই তিনি কণ্ঠস্বর দেওয়ার মত অবস্থায় নেই। এরপর দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও সেই বার খালি হাতেই ফিরেছিল ইডি।
প্রসঙ্গত, ইডি যেই সময় সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই সময় থেকেই এসএসকেএমএ ভর্তি হয়ে যান কালীঘাটের কাকু। আর সেই একই সময় থেকেই ইডির ইমেল আসতে থাকে সাধারণ মানুষের ‘পরামর্শ’।
ইমেলে কেউ লিখেছেন, ‘আপনারা এত বোকা কেন! আদালতে যাতায়াতের পথে কখনও না কখনও তো কাকু কথা বলে থাকেন। সেই সময় কণ্ঠস্বরের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করলেই তো ল্যাটা চুকে যায়!’ কেউ আবার লিখেছেন, ‘আপনারা এত ছোটাছুটি করছেন কেন? কাকুর দেওয়া কোনও টিভি সাক্ষাত্কারের অংশকে নমুনা হিসাবে নিলেই তো সব মিটে যায়।’ শুধু এই দু-একটি নয়, এরম আরও হাজারটা পরামর্শ এসেই চলেছে।
সাধারণত, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যখন কোনও রাজ্যে তদন্ত করে তখন কোনো নির্দিষ্ট একজন আধিকারিককে সাধারণ মানুষের দেওয়া তথ্য খতিয়ে দেখার জন্য রাখা হয়। এ জন্য নির্দিষ্ট ইমেল আইডি বা ফোন নম্বর থাকে। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তেও সেরমটাই করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যের চাইতে ‘বেকার’ পরামর্শই এসেছে ভুরি ভুরি।
এই প্রসঙ্গে এক অবাঙালি ইডি আধিকারিক বলেন, প্রথম দিকে সাধারণ মানুষের এই সমস্ত পরামর্শ পড়তে বেশ মজা লাগলেও যখন থেকে খুব বেশি পরিমাণে ইমেল আসতে শুরু করল তখন থেকে গোটা বিষয়টি সমস্যার হয়ে গেল। দরকারি ইমেলই খুঁজে পাওয়া চাপের হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে। ইডির আধিকারিকদের সাফ কথা, ‘এভিডেন্স অ্যাক্ট’-এর আওতায় ইমেলে আসা পরামর্শর কোনোভাবেই কাকুর কণ্ঠের নমুনা সংগ্রহ করলে আদালতে তা গ্রাহ্য হত না। তা করতে হত নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সাউন্ড প্রুফ ঘরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, চিকিৎসক, সাক্ষ্য প্রমুখের উপস্থিতিতেই।