ভিনরাজ্যে ‘হেনস্থা’ আটকাতে শেষ ভরসা ‘PPC’, আবেদনের ঢল মুর্শিদাবাদে

Published on:

Published on:

Police clearance rush in Murshidabad

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা ক্রমাগত হেনস্থার মুখে পড়ছেন। শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে অনেকেই ‘বাংলাদেশি’ বলে অপদস্থ হচ্ছেন, এমনকি গ্রেফতার পর্যন্ত করা হচ্ছে। আধার কার্ড, ভোটার আইডি কিংবা প্যান কার্ড দেখালেও মিলছে না রেহাই। এই অবিশ্বাস ও সন্দেহের আবহে বাঁচার একমাত্র উপায় হয়ে উঠেছে একটি সরকারি নথি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট বা PCC। এই পরিস্থিতিতে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলার শ্রমিকরা বিপুল হারে PCC-র আবেদন করছেন।

‘PPC’ আবেদনের ঢল মুর্শিদাবাদে (Murshidabad)

জেলা পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ এই সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেছেন। প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ২০০টি আবেদন জমা পড়ছে জেলার নির্দিষ্ট পোর্টালে। আবেদনের বেশিরভাগই আসছে ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের কাছ থেকে।

মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিং জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই প্রায় ১০০ জন পরিযায়ী শ্রমিককে অন্য রাজ্য থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের সবার ক্ষেত্রেই PCC জমা দেওয়ার পর মুক্তি মিলেছে। এখন যাঁরা আবেদন করছেন, তাঁদের সব নথি ভালো করে যাচাই করা হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনও চালু করা হয়েছে (৯১৪৭৭২৭৬৬৬) যাতে শ্রমিকরা সহজে যোগাযোগ করতে পারেন।

PCC কী? কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (PCC) হল এমন একটি নথি যা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা থেকে দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ থাকে যে আবেদনকারী কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কি না, অথবা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা বা শাস্তি আছে কি না। সাধারণত বিদেশযাত্রা বা সরকারি চাকরির সময় PCC প্রয়োজন হয়, কিন্তু এখন বাংলার শ্রমিকদের কাছে এটি হয়ে উঠেছে পরিচয়ের সুরক্ষা-বর্ম।

PCC সম্পূর্ণভাবে অনলাইন ভিত্তিক। জেলা পুলিশের নির্দিষ্ট পোর্টালে গিয়ে আবেদন করতে হয়। প্রথমে মোবাইল নম্বর রেজিস্ট্রেশন করে OTP যাচাই করতে হয়। এরপর আবেদনকারীকে নিজের নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, অভিভাবকের নাম, পরিচয়পত্র— এসব জমা দিতে হয়। পুলিশ এরপর সেই তথ্য যাচাই করে ক্লিয়ারেন্স দেয়।

হরিহরপাড়ার এক শ্রমিক আইজুদ্দিন মণ্ডল জানান, ছত্তীসগড়ে তাঁকে বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশ ধরে নেয়। আধার-প্যান দেখানোর পরেও কোনও কাজ হয়নি। পরে নিজের থানার PCC পাঠানোর পরই ছাড়া পান। একই অভিজ্ঞতা জলঙ্গির আরশাদ খানের। তিনি বলেন, “এখন তো বাংলায় কথা বললেই সন্দেহ হয়, তাই আগেই PCC তৈরি করে নিচ্ছি।”

Police clearance rush in Murshidabad

আরও পড়ুনঃ বাধ্যতামূলক হলো ‘বাংলা’, ভাষা আন্দোলনের আগেই বড় সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা কর্পোরেশন

এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর এই সন্দেহজনক মনোভাব একেবারে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটি আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত, যাতে বাঙালিদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে, ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া হাজার হাজার শ্রমিকের কাছে এখন PCC শুধু কাগজ নয়, বরং তাঁদের জীবনের রক্ষাকবচ। এটি না থাকলে হয়রানি, গ্রেফতার এমনকি চাকরি হারানোর ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে। তাই আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে পরিচয়পত্রের সঙ্গে PCC তৈরি রাখছেন বহু মানুষ।