বাংলাহান্ট ডেস্ক: ব্রাজিলে (Brazil) আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় জৈব কারখানা। যেখানে ওলবাচিয়া ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত মশার প্রজনন করা হবে। দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ রুখতে এই উদ্যোগকে ভবিষ্যতের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এক নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। কুরিটিবার ‘ওলবিতো দো ব্রাজিল’ প্ল্যান্টটি ১৯ জুলাই থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে। এটি ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সহায়তায় ওয়ার্ল্ড মসকুইটো প্রোগ্রাম, অসওয়াল্ডো ক্রুজ ফাউন্ডেশন এবং পারানার আণবিক জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে তৈরি। কারখানাটিতে প্রতি সপ্তাহে ১০ কোটি মশার ডিম উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে, যা দিয়ে আগামী দিনে অন্তত ১৪ কোটি মানুষকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে নয়া উপায় ব্রাজিলের (Brazil):
সংস্থার প্রধান নির্বাহী লুসিয়ানো মোরেরা জানিয়েছেন, ওলবিতো দো ব্রাজিলের (Brazil) উৎপাদন ক্ষমতার ফলে প্রতি ছয় মাসে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ডেঙ্গুকে প্রায়শই ‘হাড় ভাঙা জ্বর’ বলা হয়, কারণ এ রোগে তীব্র শরীর ব্যথা হয়। এডিস এজিপ্টি মশার মাধ্যমে ছড়ানো এই ভাইরাসজনিত রোগে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে কয়েক মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে, শুধু গত বছরই ব্রাজিলে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ৬,২৯৭ জন।
আরও পড়ুন:উৎসবের মরশুমে ফের বাড়ল সোনার দাম! ১ গ্রাম হলুদ ধাতু কিনতে কত খরচ? জানুন আজকের রেট
ওলবাচিয়া ব্যাকটেরিয়া মশাদের মধ্যে প্রবেশ করলে তারা আর ডেঙ্গু, জিকা বা চিকুনগুনিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগ ছড়াতে পারে না। তাই এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত মশাদের প্রজনন করেই প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ব্রাজিলের (Brazil) স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, ২০১৪ সাল থেকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই দেশের আটটি শহরে ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ সুরক্ষিত হয়েছেন। উৎপাদন ব্যবস্থাপক আন্তোনিও ব্র্যান্ডাও জানিয়েছেন, পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাঁর কথায়, “ওলবাচিয়া শুধু পোকামাকড়ের কোষের ভেতরেই বেঁচে থাকে। কোনও পোকামাকড় মারা গেলে এরও মৃত্যু হয়। তাছাড়া প্রকৃতির ৬০ শতাংশেরও বেশি পোকামাকড়ের মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া বহু শতাব্দী ধরে বিদ্যমান, অথচ মানুষের ক্ষতি কখনও দেখা যায়নি।”
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওলবাচিয়া-সংক্রামিত মশা ভর্তি বিশেষ যানবাহন ডেঙ্গু হটস্পট এলাকাগুলিতে ঘুরবে। বোতামের এক চাপেই মশাদের প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হবে। ওলবিতো দো ব্রাজিলের (Brazil) আঞ্চলিক সমন্বয়কারী তামিলা ক্লাইন জানিয়েছেন, মুক্তির এলাকাগুলি ডেঙ্গুর প্রকোপ বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাই আক্রান্তের সংখ্যা বেশি এমন এলাকাগুলিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:-এবার অস্ট্রেলিয়ায় দাপট বৈভব সূর্যবংশীর! গড়লেন দুর্ধর্ষ রেকর্ড, অবাক গোটা ক্রিকেটবিশ্ব
ডেঙ্গু এখন শুধু ব্রাজিলের (Brazil) সমস্যা নয়। ১৯৭০ সালে মাত্র সাতটি দেশে এই ভাইরাস শনাক্ত হলেও বর্তমানে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা এর ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিবছর আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছচ্ছে প্রায় ৪০ কোটিতে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, দ্রুত নগরায়ণ এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এই বিস্তারের অন্যতম কারণ। এমনকি ইউরোপেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।
সিঙ্গাপুরে যেখানে কেবল পুরুষ ওলবাচিয়া-সংক্রামিত মশা মুক্তি দিয়ে প্রজনন ব্যাহত করার কৌশল নেওয়া হয়েছে, সেখানে ব্রাজিল পুরুষ ও মহিলা উভয় মশার উপর নির্ভর করছে। এই কৌশলটি আরও দ্রুত কার্যকর হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা। অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা প্রায় ১৫ বছর আগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ওলবাচিয়ার কার্যকারিতা আবিষ্কার করেছিলেন। বহু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, এটি কার্যকর ও সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন টিকাদান কর্মসূচির পাশাপাশি ওলবাচিয়া-সংক্রামিত মশা ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে (Brazil) এক যুগান্তকারী অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।