বাংলাহান্ট ডেস্ক: চেন্নাইয়ের তরুণ ব্যবসায়ী কুণাল ভান্ডারির সাফল্যের গল্প (Success Story) আজ অনেকের অনুপ্রেরণা। মাত্র ২ বছরের মধ্যে তিনি গড়ে তুলেছেন ৩০ কোটি টাকার টার্নওভার-সমৃদ্ধ ব্র্যান্ড ‘GREE’। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা মূলত অ্যাডহেসিভ ও সিল্যান্ট তৈরি করে। পারিবারিক ব্যবসার বাইরে গিয়ে কুণাল নিজের আলাদা পরিচয় গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এই পথ মোটেই সহজ ছিল না—ব্যবসার প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি ৩৫ লক্ষ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েন। কিন্তু সেই ব্যর্থতাকেই তিনি জীবনের বড় শিক্ষা হিসেবে নেন, যা তাঁর পরবর্তী সাফল্যের ভিত্তি তৈরি করে।
কুণালের অনন্য সফলতার কাহিনি (Success Story):
চেন্নাইয়ের এক ঐতিহ্যবাহী মারোয়াড়ি শিল্পপতি পরিবারের সন্তান কুণাল ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার পরিবেশে বড় হয়েছেন। তাঁর পরিবার বহু বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেপ ম্যানুফ্যাকচারিং-এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়াশোনা শেষ করার পর থেকেই কুণালের মনে একটি ব্র্যান্ড তৈরি করার স্বপ্ন ছিল—যা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবে, তাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগবে এবং সরাসরি উপকার দেবে। ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর ভাবনা ও গৃহস্থালি মেরামতির জন্য সহজ সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তাঁকে প্রেরণা দেয় (Success Story)।
আরও পড়ুন:“পাকিস্তানের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিল INS বিক্রান্ত”, নৌবাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে দীপাবলি উদযাপন মোদীর
২০১৮ সালে এই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় ‘GREE’। কনজিউমার-কেন্দ্রিক এই ব্র্যান্ড ইনোভেশন, পারফরম্যান্স ও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। কোম্পানি চালুর আগে কুণাল দু’ বছর ধরে পণ্যের উপর গভীর গবেষণা ও পরীক্ষা চালান। কিন্তু প্রথম উদ্যোগেই তিনি বড় ধাক্কা খান—চিনে কনট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং চলাকালীন পণ্যের মান খারাপ হওয়ায় ৩৫ লক্ষ টাকার স্টক ফেলে দিতে বাধ্য হন। সেই সময় ছয় মাসের জন্য তিনি কাজ থামিয়ে দেন, তবে হাল ছাড়েননি। পরে তিনি কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের নিয়ম (SOP) চালু করেন, যার ফলে এরপর থেকে কোনও প্রোডাক্ট রিটার্ন বা মান সংক্রান্ত অভিযোগ আসেনি (Success Story)।
কুণাল ভান্ডারি তাঁর ব্যবসাকে বাড়াতে কখনোই বাইরের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল (VC) ফান্ডিং-এর ওপর নির্ভর করেননি। তাঁর বিপণন কৌশল ছিল সহজ ও কার্যকরী—বড় বিজ্ঞাপন প্রচারের বদলে তিনি গুরুত্ব দেন শক্তিশালী ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলায়। হার্ডওয়্যার ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে পার্টনারশিপ করে তিনি খুব অল্প সময়ে দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের বাজার দখল করেন। বর্তমানে তাঁর পণ্য ১১০-রও বেশি ডিস্ট্রিবিউটর ও প্রায় ১১,০০০ খুচরো দোকানে পাওয়া যায়। মাত্র ২৫ জন কর্মীর একটি দল নিয়ে তিনি প্রথম বছরেই ১ কোটি টাকার আয় করেন এবং দুই বছরের মাথায় টার্নওভার পৌঁছায় ৩০ কোটিতে (Success Story)।
আরও পড়ুন:সরকারের ১০০০০ টাকা ‘উপহারের’ সিদ্ধান্তে খুশি নন, এবার নয়া দাবি নিয়ে শুরু বিক্ষোভ
আজ ‘GREE’-এর বাজারমূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে সাফল্যের পর কুণাল এখন মধ্য ও উত্তর ভারতের বাজারে প্রবেশের পরিকল্পনা করছেন। এজন্য আহমেদাবাদে নতুন ওয়্যারহাউস স্থাপন করা হয়েছে। তাঁর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য শুধু ব্যবসা বাড়ানো নয়—তিনি কোম্পানিকে ১,০০০ কোটি টাকার বিক্রির লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে চান। দেশীয় উৎপাদনকে আরও শক্তিশালী করা এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র আদর্শকে সামনে রেখে কুণাল ভান্ডারি আজ ভারতের তরুণ ব্যবসায়ী কাছে সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত (Success Story)।