বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন একটি বিষয় উপস্থাপিত করব যেটি জানার পর অবাক হবেন প্রত্যেকেই। মূলত, রাশিয়া (Russia) এমন একটি রেললাইন তৈরি করছে যেটির মাধ্যমে সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ভারতের (India) মুম্বাইতে পণ্য পৌঁছতে মাত্র ১০ দিন সময় লাগবে। বর্তমানে এটি ৩০ থেকে ৪৫ দিন সময় নেয়। উল্লেখ্য যে, বহু শতাব্দী ধরে, রাশিয়ার অর্থনীতিতে ইউরোপের সাথে বাণিজ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ এই পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর চিন (China) ও ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্য বহুগুণ বেড়েছে। এই কারণেই রাশিয়া এখন একটি রেললাইন তৈরি করছে। যা ভারত ও চিনে তাদের পণ্যের প্রবেশ আরও সহজ করবে। শুধু তাই নয়, এই রেললাইন আগামী দিনে সুয়েজ খালের মাধ্যমে বাণিজ্যে কঠিন প্রতিযোগিতা দিতে পারে বলেও দাবি করা হচ্ছে।
পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা: ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমী দেশগুলি রাশিয়ার ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়াও যেসব দেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায় তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত, চিন ও পারস্য উপসাগরীয় দেশ। রাশিয়ার নীতিনির্ধারকরা এখন দক্ষিণের এই পথের দিকে নজর দিতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন। এই ১.৭ বিলিয়ন ডলারের লাইনের কাজ এই বছর শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি রাশিয়াকে সরাসরি ইরানের বন্দরের সাথে সংযুক্ত করবে। এতে মুম্বাইয়ে তার প্রবেশ আরও সহজ হবে। রাশিয়া এই প্রকল্পের জন্য ইরানকে ১.৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতেও সম্মত হয়েছে।
সব রাস্তা বন্ধ: নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাকু’র পরিবহণ ও সরবরাহ বিশেষজ্ঞ রউফ আগামিরাজায়েভ বলেছেন যে, রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য রুট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই তাকে অন্যান্য বিকল্পের সন্ধান করতে হবে। এমতাবস্থায়, পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠতে রাশিয়া বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি করা হচ্ছে এবং অন্যান্য ধরণের পণ্যও তুরস্ক এবং উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এমনকি, ইউরোপের পণ্য তৃতীয় দেশ হয়ে রাশিয়ায় পৌঁছচ্ছে।
লাগবে ১০ দিন সময়: উল্লেখ্য যে, রাশিয়ার সরকার ইরানের রেললাইনকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি আমদানি-রপ্তানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, এই নতুন রুটের মাধ্যমে সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মুম্বাইতে পণ্য পৌঁছতে দশ দিন সময় লাগবে। বর্তমানে যেটির জন্য সময় লাগে ৩০ থেকে ৪৫ দিন। রাশিয়ান আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে, এটি একটি বৈপ্লবিক প্রকল্প। যা সুয়েজ খালের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এতে ভারতের পাশাপাশি চিনে পণ্যের সরবরাহ সহজ হবে। জানিয়ে রাখি যে, ইউক্রেন যুদ্ধের পর চিনের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্য ৬১ শতাংশ বেড়ে ২৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারতীয় নৌবাহিনীর দাপটে “হাঁ” হয়ে গেল শত্রুদেশ! আরব সাগরে শক্তি প্রদর্শন ৮ টি সাবমেরিনের
ভারতের সাথে বাণিজ্য: ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ২০২১ সালের তুলনায় ৪ গুণ বেড়ে ৬৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারত ও চিনের সাথে রাশিয়ার বাণিজ্যের পরিমাণ ইউরোপিয় ইউনিয়নের সাথে তার বাণিজ্যকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০২১ সালে রাশিয়া এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের মধ্যে ২৮২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছিল। ভারত রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অপরিশোধিত তেলও আমদানি করছে।
আরও পড়ুন: হোলির দিনে দুর্দান্ত উপহার! পেট্রোল-ডিজেলের দামে মিলল বড় স্বস্তি, জানুন সর্বশেষ রেট
কি লাভ হবে: নতুন রেললাইন ইরানের দু’টি শহর আস্তারা এবং রাশতকে সংযুক্ত করবে। এটি ইরানকে উত্তরে আজারবাইজানের সাথে সংযুক্ত করবে এবং এইভাবে রাশিয়ান রেলওয়ে গ্রিডে অ্যাক্সেস মিলবে। এই রেললাইনটি ২০২৮ সালে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এইভাবে এই লাইন প্রসারিত হবে ৬,৯২০ কিলোমিটার। এর ফলে রাশিয়ান ব্যবসায়ীরা পারস্য উপসাগরে ইরানের বন্দর দিয়ে সহজেই ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও পাকিস্তানেও সহজে পৌঁছে যাওয়া যাবে।