বাংলা হান্ট ডেস্ক: গত বছরে চাঁদের পৃষ্ঠে চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan-3)-এর সফল অবতরণের মাধ্যমে ইতিহাস তৈরি করে ISRO (Indian Space Research Organisation)। যেই ঘটনা অবাক করে দিয়েছিল সমগ্র বিশ্বকে। তবে, এবার ফের একটি অসাধ্যসাধন করে দেখালো ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, ইতিমধ্যেই গত ২২ মার্চ পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান উৎক্ষেপণযান “পুষ্পক” (Pushpak)-এর দ্বিতীয় সফল অবতরণ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ISRO-র এই নয়া মহাকাশযান উৎক্ষেপণযানের নাম রাখা হয়েছে “রামায়ণ”-এ উল্লিখিত “পুষ্পক” রথের নামানুসারে। এমতাবস্থায়, এই মহাকাশযান উৎক্ষেপণযানের ফের সফল হওয়ার বিষয়টি মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে বলেই বিশ্বাস রাখছেন বিজ্ঞানীরা। মূলত, দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান উৎক্ষেপণযান তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মহাকাশযান উৎক্ষেপণের সামগ্রিক খরচ কমিয়ে নিয়ে আসা এবং মহাকাশ অভিযানকে আরও সার্বিক করে তোলা। আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতেই তৈরি করা হয়েছে “পুষ্পক”-কে।
জানিয়ে রাখি যে, ISRO বহুদিন ধরেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান উৎক্ষেপণের বিষয়ে আগ্রহী ছিল। পাশাপাশি, এই বিষয়ে তাদের বৃহত্তর পরিকল্পনাও রয়েছে। যেটির প্রাথমিক সংস্করণ হিসেবে প্রকাশ্যে এসেছে “পুষ্পক”। এমতাবস্থায়, প্রতিটি উৎক্ষেপণে এই পুনর্ব্যবহারযোগ্য যানের ব্যবহার করা সম্ভব হলে মহাকাশ অভিযানের খরচ একধাক্কায় ৮০ শতাংশ নেমে আসতে পারে। বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে মহাকাশে ১ কেজি ওজনের পেলোড পাঠাতে খরচ হয় ১০ থেকে ১২.৫ লক্ষ টাকার মতো। এদিকে, ISRO- র লক্ষ্য হল প্রতি কেজি পেলোড পাঠানোর এই খরচকে ৪০ থেকে ৮০ হাজারে নামিয়ে আনা।
আরও পড়ুন: ভারতের লাভে থাবা বসাচ্ছে পাকিস্তান! চাল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ল পড়শি দেশ, সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
এক্ষেত্রে দুই ধাপে এই খরচ হ্রাস সম্পন্ন হবে। প্রথমত, পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎক্ষেপণযানের ব্যবহার এবং আরও কার্যকরী প্রপালসন প্রযুক্তির ব্যবহার। যার মধ্যে অন্যতম হল Air Breathing Rocket। এটির মাধ্যমে পৃথিবী থেকে অক্সিজেন বয়ে না গিয়ে সরাসরি বায়ুমণ্ডল থেকেই অক্সিজেন সংগ্রহ করে মহাকাশে পাড়ি দেবে পুষ্পক। এদিকে, মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে আরও একটি জটিল বিষয় হল, কোনো যানকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা। কিন্তু, পুষ্পকের মাধ্যমে সেই বিষয়টিকেও সম্পন্ন করেছে ISRO। বায়ুমণ্ডলে ফের প্রবেশের ক্ষেত্রে যাতে প্রচণ্ড তাপমাত্রায় পুষ্পকের কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য রয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের মে মাসে পরীক্ষার সময়ে পুষ্পক উড়েছিল ৬৫ কিলোমিটার উঁচুতে। তারপর সেটি ফের তীব্র গতিতে পুনরায় বায়ুণ্ডলে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।
আরও পড়ুন: “মহাকাশে ভারত যা করছে তা বিস্ময়কর”, ISRO-র সাফল্যে অবাক ইউরোপিয় মহাকাশ সংস্থা! উঠল প্রশংসার ঝড়
মূলত, পুষ্পক একেবারে গ্লাইডারের মতো নির্ধারিত রানওয়েতে নেমে আসতে সক্ষম হবে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, স্বয়ংক্রিয় ভাবেই এই অবতরণ নিয়ন্ত্রিত হবে বলেও জানা গিয়েছে। এমনকি, যেকোনও প্রতিকূল অবস্থাতেও এর হেরফের হবে না। উল্লেখ্য যে, ISRO-র এই পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান উৎক্ষেপণযানে ৩ টি বিষয়কে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং অক্ষত অবস্থায় পৃথিবীতে ফেরত আসা ও নিরাপদ অবতরণ।