বাংলা হান্ট ডেস্ক: বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরও কিভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে সাফল্যের (Success Story) শিখরে পৌঁছানো যায় তাঁর জলজ্যান্ত উদাহরণ নীরজ তিওয়ারি। জীবন কোনও না কোনও সময়ে মানুষ এমন এক সংকটে পড়ে, যখন ব্যর্থতা তাকে থামিয়ে দিতে চায়। নীরজও সেরকম এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন, যখন চাকরির প্রতিটি চেষ্টাই বারবার ব্যর্থতায় শেষ হচ্ছিল। কোথাও আবেদন করলে মিলত পরিচিত সেই জবাব—‘আমরা আপনাকে কল করব।’ এই একের পর এক প্রত্যাখ্যান তাঁর ভিতরের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিচ্ছিল, তবুও তিনি হার মানেননি। ২০১২ সালে মাত্র ৫০ হাজার টাকার মূলধন, দুঃসাহস, সন্দেহ আর অসম্ভবকে সম্ভব করার মানসিকতা নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন হাইটেক হিউম্যান ক্যাপিটাল (ইন্ডিয়া) লিমিটেড – HHCIL। তখন এটি ছিল একটি ছোট উদ্যোগ, কিন্তু সেই ছোট্ট স্বপ্নই পরে হয়ে উঠল এক বৃহৎ প্রতিষ্ঠান।
নীরজের অসাধারণ সাফল্যের কাহিনি (Success Story):
শুরুটা ছিল মাত্র দশজন কর্মী নিয়ে। নিরাপত্তা পরিষেবা ও ফ্যাসিলিটি ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে তখনই বহু বড় সংস্থা বাজারে ছিল, ফলে নতুন কোম্পানির প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি করা নীরজের কাছে ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তিনি শুরু থেকেই পরিষেবার মানে কোনও আপস করেননি। কম খরচে উন্নত মানের পরিষেবা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং পেশাদারিত্ব—এই তিন ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে কয়েক বছরের মধ্যেই HHCIL ধীরে ধীরে গ্রাহকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নাম হয়ে ওঠে। প্রতিটি সাফল্যের সঙ্গে বাড়তে থাকে কর্মীর সংখ্যা, বিস্তৃত হতে থাকে কাজের ক্ষেত্র, এবং ছোট্ট উদ্যোগটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড়াতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: তৈরি হবে নয়া সঙ্কট? ১০ বছরে ৩০ লক্ষ চাকরি ‘খেতে পারে’ AI, রিপোর্টে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য
সময় যত এগিয়েছে, ততই দ্রুত বেড়েছে কোম্পানির কার্যক্ষেত্র। নিরাপত্তা পরিষেবার পাশাপাশি কোম্পানি যুক্ত হয়েছে ক্যাশ সলিউশন, কর্পোরেট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, ফ্যাসিলিটি ম্যানেজমেন্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড ভেরিফিকেশন সহ বিভিন্ন পরিষেবায়। বর্তমানে HHCIL-এর বিস্তার ১২টি রাজ্যে এবং প্রায় চার হাজারেরও বেশি কর্মী এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। নীরজ তিওয়ারির কঠোর পরিশ্রম ও দূরদর্শী পরিকল্পনার ফল হিসেবে কোম্পানিটি আজ প্রায় হাজার কোটি টাকার বার্ষিক রাজস্ব অর্জন করেছে, যা যে কোনও উদ্যোক্তার কাছে এক বিশাল মাইলস্টোন (Success Story)।
কোম্পানির সাফল্যের (Success Story) স্বীকৃতি মিলেছে শুরুতেই। প্রতিষ্ঠার মাত্র ছয় বছর পরই HHCIL পায় ‘গুজরাটের সেরা নিরাপত্তা সংস্থা’ সম্মান। ২০১৭ সালে নীরজ তিওয়ারিকে দেওয়া হয় ‘ইয়াং অ্যাচিভার্স অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার, যা তাঁর উদ্যোক্তা হিসেবে দ্রুত সাফল্য পাওয়ার প্রমাণ বহন করে। বর্তমানে কোম্পানি IPO আনার প্রস্তুতি শুরু করেছে এবং লক্ষ্য ঠিক করেছে ২০২৭-২৮ অর্থবর্ষে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার। শুরুতে যে কোম্পানি ছিল দশজনের একটি ছোট দল, সেটিই আজ হাজার হাজার পরিবারের জীবিকার উৎস হয়ে উঠেছে (Success Story)।

আরও পড়ুন:অনুপ্রবেশ রুখতে চরম সতর্ক BSF! এক বছরেই পাকড়াও এত হাজার বাংলাদেশি, জানলে হবেন ‘থ’
নীরজ তিওয়ারির জীবনের এই যাত্রা প্রমাণ করে যে সীমিত মূলধন মানুষের স্বপ্নকে আটকে দিতে পারে না, যদি তার সাহস, আত্মবিশ্বাস ও কঠোর পরিশ্রম অটুট থাকে। তিনি বুঝেছিলেন যে সুযোগের অপেক্ষায় বসে থাকলে সাফল্য মিলবে না, বরং নিজের জন্য সুযোগ তৈরি করতে হয়। তাঁর গল্প বলে—চ্যালেঞ্জ কখনও পথ আটকায় না, বরং পরীক্ষা করে দেখে আপনার সংকল্প কতটা দৃঢ়। বড় সংস্থা গড়ে ওঠে সম্পদে, কিন্তু পরিচয় গড়ে ওঠে বিশ্বাস ও গুণমানের উপর। আর সাফল্য জন্ম নেয় ঠিক সেই জায়গায়, যেখানে ভয় শেষ হয় এবং প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস শুরু হয় (Success Story)।












