বাংলা হান্ট ডেস্কঃ অবসরের ঠিক আগে এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু (Justice Biswajit Basu)। প্রথামাফিক বিদায় সংবর্ধনা হলেও সেখানে তিনি থাকবেন না। অভিমান ও মানসিক আঘাত থেকেই এমন সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল।
আগামী ৩ জানুয়ারি অবসর নিচ্ছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু (Justice Biswajit Basu)
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু (Justice Biswajit Basu) আগামী ৩ জানুয়ারি অবসর নিচ্ছেন। তবে অবসরের আগে যে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়, সেই অনুষ্ঠানে তিনি থাকবেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিচারপতির ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, দীর্ঘদিনের অভিমান ও খারাপ লাগা থেকেই এই সিদ্ধান্ত। বিষয়টি তিনি চিঠি দিয়ে হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকেও জানিয়েছেন।
প্রথা অনুযায়ী, কোনও বিচারপতির অবসরের আগে ‘ফুল কোর্ট’ বসে। সেখানে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি-সহ সমস্ত বিচারপতিরা উপস্থিত থাকেন। পাশাপাশি, আইনজীবীদের তিনটি সংগঠনের পক্ষ থেকে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই তিন সংগঠন হল- বার অ্যাসোসিয়েশন, বার লাইব্রেরি এবং ইনকর্পোরেট ল’ সোসাইটি।কিন্তু সেই প্রথার বাইরে গিয়েই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন বিচারপতি বসু (Justice Biswajit Basu)।
অভিযোগ উঠেছে, গত জুলাই মাসে হাই কোর্ট চত্বরে উচ্চ প্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলাকে ঘিরে ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ বিচারপতি বসুর (Justice Biswajit Basu) ছবির উপর পা দিয়ে মাড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান। সেই সময় তাঁর উদ্দেশ্যে আপত্তিকর মন্তব্যও করা হয়। সংবাদমাধ্যমে সেই ছবি প্রকাশ্যে এলেও আইনজীবীদের কোনও সংগঠনের তরফে তখন প্রকাশ্যে কোনও প্রতিবাদ বা বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
বিচারপতির ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিচারপতি বসু (Justice Biswajit Basu) নিজে একসময় প্রায় ২০ বছর বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি বিচারপতির পদে উন্নীত হন। কিন্তু ওই ঘটনার সময় যেভাবে তাঁর অপমান করা হয়েছিল, তাতে কেউ পাশে দাঁড়াননি বলেই তাঁর অভিযোগ। সেই কারণেই এখন অবসরের দিনে আইনজীবীদের কাছ থেকে সৌজন্যমূলক কথা বা সংবর্ধনা গ্রহণ করতে তিনি আগ্রহী নন। তাই ওই অনুষ্ঠানে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ এক দপ্তরে আটকে থাকার দিন শেষ! ডিরেক্টরেট কর্মীদের জন্য বড় সিদ্ধান্ত নবান্নের
উল্লেখ্য, বিচারপতির ছবিতে পা দিয়ে মাড়ানোর ঘটনার সময় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। আদালত অবমাননার মামলায় চাকরিপ্রার্থীদের ভর্ৎসনাও করে আদালত। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের তিন বিচারপতির বেঞ্চ ওই ঘটনায় প্রশ্ন তোলে, “বিক্ষোভে একজন বিচারপতির ছবি রাখার অর্থ কী? তাঁর ছবির উপর পা দেওয়া হচ্ছে! এটা কি হতাশার প্রকাশ? বিচারপতিকে সম্মান জানানো হচ্ছে না, এটা তো পরিষ্কার।”
আরও পড়ুনঃ
ওই মামলায় পরে চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাও চাওয়া হয়েছিল। তবুও সেই ঘটনার রেশ কাটেনি বলেই মনে করছেন অনেকেই। আর সেই অভিমানই শেষ পর্যন্ত বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর (Justice Biswajit Basu) অবসর-পূর্ব বিদায় অনুষ্ঠানে না থাকার সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা নিল।












