বাংলাহান্ট ডেস্ক : আমাদের এই পৃথিবীতে কত লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন যাদের প্রভূত সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও তারা ছুটছেন টাকার পিছনে। তারা যতই পান ততই কম মনে হয় তাদের। কিন্তু এর কিছু বিপরীত চিত্রও দেখা যায় সমাজের কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আজ আমরা নিয়ে এসেছি এমন একটি প্রতিবেদন যেখানে পেশায় দিনমজুর কার্তিক নিজের তৈরি একটি পাকা বাড়ি তুলে দিয়েছেন স্কুলের হাতে।
অন্যের জমিতে মজুরি খেটে সংসার চলে আমতলা গ্রামের বাসিন্দা কার্তিকের। মাঝে মাঝে সুযোগ পেলে অন্যের জমিতে চেষ্টা করেন সামান্য চাষবাসের। সেই কার্তিকের বহুদিনের স্বপ্ন ছিল নিজের জন্য একটা পাকা বাড়ি বানানোর। এরপর তিল তিল করে টাকা জমিয়ে নিজের রক্ত জল করে তৈরি করেছিলেন একটি ছোট পাকা বাড়ি। অন্যদিকে কার্তিকের গ্রামের প্রাথমিক স্কুল বাড়ি তৈরির কাজ আটকে আছে বহুদিন ধরে। জমি জটিলতার কারণে বারবার পিছিয়ে হচ্ছে সেই কাজ। তারপর কার্তিক এগিয়ে আসেন এই সমস্যার সমাধানের জন্য। তার তৈরি নিজের পাকা বাড়িটি ব্যবহার করতে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষকে।
কার্তিকের স্বপ্নের পাকা বাড়িতে এখন বসছে স্কুলের আসর। কিন্তু কার্তিক পরিবার সহ এখনো থাকেন তার পাশের পুরনো টিন টালির ঘরে। কার্তিক জানিয়েছেন, “তাদের গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক স্কুল ২০১৪ সাল থেকে বসত গাছ তলায়। রোদ, ঝড়, জলে খুবই কষ্ট হতো বাচ্চাগুলোর। তাই আমার বাড়িটা যখন তৈরি হয়ে গেল দিয়ে দিলাম স্কুল করার জন্য।”
এহেন দিনমজুর কার্তিক নিজে মাধ্যমিক পাশ করতে পারেননি। কিন্তু খুব কষ্ট করে মেয়ে নিস্তারমণি ও ছেলে ভোলানাথকে হাই স্কুলে পড়াশোনা করাচ্ছেন। তার ছেলেমেয়েরাও একসময় এই গাছতলা স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন। সন্তানদের কষ্ট দেখে তাই নিজের তৈরি বাড়িটা তুলে দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষকে। উল্লেখ্য, সরকার এই স্কুল বাড়ি বানানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পূরণ করেনি।
আমতলার প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা মাত্র তিনজন। কোনও প্রধান শিক্ষক নেই। স্কুলের এক শিক্ষিকা স্বর্ণালীর কথায়, “কার্তিক বাবু ও তার স্ত্রী না থাকলে এই স্কুল চালান সম্ভব হতো না। আগে স্কুলের ক্লাস হতো মাঠে। তারপর কার্তিক বাবুর বাড়ির উঠোনের গাছ তলায়। গত মার্চ মাসে কার্তিক বাবুর বাড়ি তৈরি শেষ হলে পুরো বাড়িটাই তুলে দেন স্কুলের হাতে। কার্তিক বাবুর এহেন উদ্যোগে আমরা সকলেই বিস্মিত!”
কার্তিকের এই কাজে গ্রামের সকল অধিবাসী আপ্লুত। তার এক প্রতিবেশী অশোক মন্ডলের কথায়, “আগে যেভাবে স্কুল হতো তা অসহনীয়। কার্তিক যেভাবে নিজের কষ্টের টাকায় তৈরি বাড়ি স্কুল এর কাজে তুলে দিয়েছে তাতে আমাদের গর্বের শেষ নেই”।
এভাবে কার্তিক ও তার স্ত্রী কল্যাণী গ্রামবাসীদের প্রশংসা রীতিমতো লজ্জিত হন। এক মুখ হাসি নিয়ে কল্যাণী জানান, “আমরা পাকা বাড়িতে থাকবো আর বাচ্চাগুলো মাঠে ঘাটে পড়াশোনা করবে তা হয় না। শহর থেকে শিক্ষক শিক্ষিকারা গ্রামে এসে আমাদের বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন। সেটা মেনে নিতে পারব না। একটা ভালো স্কুল তো আমাদেরও স্বপ্ন!”