বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃতীয়বার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বাংলায় ক্ষমতা দখল করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। তবে এই বিধানসভা নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ঘটনা অবশ্যই অধিকারী গড়ের ভাঙ্গন। নির্বাচন শুরুর কিছুদিন আগেই তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে ভারতীয় জনতা পার্টির পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এরপর আস্তে আস্তে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সরে গেছেন বাকি অধিকারী পরিবার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভায় যোগদান করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন পিতা শিশির অধিকারী। অন্যদিকে তেমনি দাদার হাত ধরে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন ভাই সৌমেন্দুও। বিধানসভা নির্বাচনে এর প্রতিফলও পেতে হয়েছে ঘাসফুল শিবিরকে। সারা বাংলায় মমতা ঝড় চললেও নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর সামনে কয়েকশো ভোটে পরাজিত হতে হয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোকে। এতকিছুর পরেও সম্পূর্ণ মৌন থেকেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ তথা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারি। বাকি পরিবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেও দলের বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খোলেননি দিব্যেন্দু। যোগ দেননি বিজেপিতেও।
কিন্তু নির্বাচন শেষে এবার তারই বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে রাজ্য নেতৃত্বেকে করার সুপারিশ করল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেছেন, ‘‘আমরা আমাদের সুপারিশ রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ বার তাঁরা যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাই চূড়ান্ত হবে।’’ তবে সামনা সামনি মুখ না খুললেও তৃণমূল নেতৃত্ব সঙ্গে সরাসরি দূরত্ব বজায় রেখেছেন দিব্যেন্দু। একদিকে যখন দাদা শুভেন্দুকে বিরোধী দলনেতা ঘোষণা করল বিজেপি। তখনই অন্যদিকে দলে থেকেও সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় তমলুকের সাংসদ।
অধিকারী পরিবারের উপর অসন্তুষ্ট স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও। এক নেতা জানান, সরাসরি দিব্যেন্দু মুখ খোলেননি ঠিকই। কিন্তু গোটা নির্বাচন জুড়ে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থেকেছেন। শুধু তাই নয় গোপনে দল বিরোধী কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। এখন তাদের হাতে এই বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ আছে বলেও এদিন দাবি করেন ওই স্থানীয় নেতা। যদিও দিব্যেন্দুর বিরুদ্ধে এখন কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেদিকে নজর থাকবে সকলেরই। কারণ দিব্যেন্দু জানিয়েছেন, ‘‘দল আমার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিলে, তবেই আমি সেই প্রসঙ্গে কথা বলব। তার আগে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’
অন্যদিকে তৃণমূলের পক্ষে দিব্যেন্দুর বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যথেষ্ট কঠিন বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। একদিকে যখন নিজের অবস্থান পষ্ট করে দিয়েছেন শুভেন্দু, সৌমেন্দু এবং বর্ষিয়ান নেতা তথা সাংসদ শিশির অধিকারী। তখন এমনিতেই লোকসভার ফলের নিরিখে অবস্থা যথেষ্ট টালমাটাল শাসকদলের। লোকসভায় এই মুহূর্তে ৪২ এর মধ্যে তৃণমূল সাংসদের সংখ্যা মাত্র ২০। তাই এই অংকে আর কোন নতুন সমীকরণ চাইবে না রাজ্যের শাসক দল। অন্যদিকে রাজ্যে বিপুল আসন লাভ করলেও নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হারায় এমনিতেই কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ঘাসফুল শিবির। তার উপর এই মুহূর্তে নতুন কোন দন্দ্বের জন্ম দেওয়া উচিত হবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।