বাংলা হান্ট ডেস্কঃ লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশজুড়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA) লাগু করার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকেই সিএএ-র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাধারণ মানুষকে ‘সতর্ক’ করার পাশাপাশি এই রাজ্যে এই আইন বলবৎ না করতে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। কেরল এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীদের গলাতেও শোনা যায় এক সুর। এবার নিয়ে এই মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)।
রাজ্য সরকারের হাতে কি আদৌ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন আটকানোর অধিকার রয়েছে? প্রশ্ন তোলেন তিনি। ২০১৯ সালে সিএএ এনেছিল কেন্দ্রীয় সরকার (Central Government)। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের এই আইনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। তবে করোনার কারণে এই আইন বলবৎ করা যায়নি। অবশেষে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) আবহে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এই আইন লাগু করার কথা ঘোষণা করা হয়।
এরপর থেকেই সিএএ-র বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ সহ একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বলেন, এক-দু’বার নয়, এই আইনে আবেদন করার আগে হাজারবার ভাবতে। সিএএ কী সেটা অনেকেই বুঝতে পারছেন না বলেই আনন্দে মাতছেন। এই আইনকে ‘বিজেপির লুডো খেলার ছক্কা’ বলেও আক্রমণ শানান মমতা।
আরও পড়ুনঃ ‘পার্টির নামে হতো বিল’! টাকাগুলো কোথায় যেত? বিস্ফোরক খবর ফাঁস করলেন শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ
বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের আবহে বৃহস্পতিবার একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে এই নিয়ে মুখ খোলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) চ্যালেঞ্জ করে সিএএ-র কোন ধারা নাগরিকত্ব কেড়ে নেয় সেটা দেখানোর কথা বলেন। পাশাপাশি ফের একবার দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে অমিত শাহ জানান, এই আইনের জন্য কেউ নাগরিকত্ব হারাবেন না। কারণ এটি নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার আইন নয়। এটি নাগরিকত্ব প্রদানের আইন। সংবিধান অনুসারে, এই আইন কার্যকর না করার কোনও কারণ নেই।
একই সাক্ষাৎকারে সংবিধান উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই আইন প্রত্যাহারের কোনও অধিকার রাজ্যগুলোর হাতে নেই। অমিত শাহের কথায়, ‘সিএএ প্রত্যাহার করার কোনও সুযোগই নেই। দলগুলো আসলে তোষণের রাজনীতি করছে। ওরা নিজেরাও জানে না, সিএএ বলবৎ করার অধিকার ওদের হাতে নেই। এটা সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় ইস্যু। সংবিধানের ১১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সকল আইন তৈরির অধিকার কেন্দ্রের হাতে রয়েছে। রাজ্যের কোনও এক্তিয়ার নেই। তোষণের রাজনীতি করতে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে’।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধ, লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর সকল দল মিলে সিএএ কার্যকর করতে সহযোগিতা করুন। তবে প্রশ্ন উঠছে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন যদি কার্যকর করা হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয় সহ বেশ কিছু রাজ্যের জনবিন্যাস বদলে যেতে পারে। বহু সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি বিপন্ন হতে পারে। সেক্ষেত্রে সিএএ লাগু করার আগে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের সঙ্গে একবার আলোচনা করা যেত না? গুজরাত-রাজস্থানে নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়ে অনেক সময়ে রাজ্যের ওপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়? অন্যান্য রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রেও কি এমনটা করা যেত না? প্রশ্ন ওয়াকিবহাল মহলের।