বাংলা হান্ট ডেস্ক: ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল (Bihar Election Result 2025)। যেখানে, রীতিমতো দাপটের সঙ্গে বিহার জয় করেছে NDA। নীতীশ কুমার (Nitish Kumar) এবং বিজেপির জোটের ওপরেই আস্থা প্রদর্শন করেছেন বিহারের মানুষ। এদিকে, পড়শি রাজ্যে NDA-র এই দুর্দান্ত ফলাফলের নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণ সামনে এলেও রাজনৈতিক মহলের একাংশ এবং কিছু মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে যে, বিহারে প্রথম দফার নির্বাচনের আগে “মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা” নামের প্রকল্পের মাধ্যমে নীতীশ সরকার মহিলাদের নগদ অর্থ দেওয়ার যে ঘোষণা করেছিলেন তারই ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভোট ব্যাঙ্কে।
বিহারে (Bihar Election Result 2025) NDA-র দাপট:
মূলত, বিহারে নির্বাচন শুরুর ঠিক প্রাক্কালেই ১ কোটি ২১ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে গিয়েছিল ১০,০০০ টাকা। এদিকে, এহেন প্রকল্পের মূল ভাবনার নেপথ্যে বঙ্গের জনপ্রিয় লক্ষ্মীর ভান্ডারের অভূতপূর্ব সাফল্য রয়েছে বলেই রাজ্যের শাসকদলের একাংশ মনে করছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল এটাও অনুমান করছে যে, সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের অর্থ প্রদানের বিষয়টি বাংলায় শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের শুরু হয়েছে। যেগুলি প্রত্যক্ষভাবে ভোটেও লাভবান করেছে রাজনৈতিক দলগুলিকে। আর সেই ভাবনাকে সামনে রেখেই ২০২৬ সালের বঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল লক্ষ্মীর ভান্ডারের বিষয়ে বড় কিছু ভাবনা ভাবতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।
The Bihar results have reignited the debate around women voters. The Congress–RJD combine not only dragged the Prime Minister’s mother into political mudslinging during the campaign, but their supporters and apologists are now deriding the women of Bihar as having “sold out.”
As… pic.twitter.com/olZ3vVmpQZ
— Amit Malviya (@amitmalviya) November 15, 2025
যদিও, বিহারের ফলাফলের নেপথ্যে এহেন প্রকল্পই যে সবথেকে বেশি দায়ী তা মানতে নারাজ বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। শুধু তাই নয়, মহিলাদের অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সাফল্যের যে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে সেই বিষয়টির কড়া সমালোচনা করে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন তিনি। “X” মাধ্যমে একটি পোস্টে অমিত মালব্য বলেন, “বিহারের ফলাফল মহিলা ভোটারদের নিয়ে বিতর্ককে পুনরায় জাগিয়ে তুলেছে। কংগ্রেস-আরজেডি জোট প্রচারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির সময়ে শুধুমাত্র প্রধামন্ত্রীর মাকেই টেনে আনেননি, বরং তাদের সমর্থকরা এখন বিহারের মহিলারা ‘বিক্রি হয়ে গেছে’ বলে উপহাস করছেন।”‘
পাশাপাশি, অমিত মালব্য এটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন যে, মানসিক দিক থেকে কতটা অসুস্থ হলে NDA সরকার কীভাবে লক্ষ লক্ষ মহিলাকে আর্থিক স্বাধীনতা প্রদান করেছেন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে বিবেচিত করেছে তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে। তিনি আরও জানান, “যদি জনগণের হাতে শুধু টাকা দিলেই জয় নিশ্চিত হত তাহলে তেলেঙ্গানার KCR এবং অন্ধ্রপ্রদেশের জগ মোহন রেড্ডি কখনও পরাজিত হতেন না। উভয় সরকারই নির্বাচনের আগে কোষাগার খালি করেছিল। তখন কেউ আপত্তি জানায়নি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের প্রত্যেক দরিদ্র মহিলাকে প্রতিবছর ১ লক্ষ টাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া ‘গ্যারান্টি কার্ড’ সময়েও কেউ আপত্তি করেননি। যা শেষ পর্যন্ত তারা হেরে যায়।”
আরও পড়ুন: মাঠে নামলেই গড়ছেন একের পর এক রেকর্ড! এবার যা করে দেখালেন বৈভব সূর্যবংশী, অবাক ক্রিকেট বিশ্ব
অমিত মালব্য জানান, “বিহারে আর্থিক সাহায্য কোনও সম্পদ তৈরি বা আয় সৃষ্টিকারী কর্মসূচির অংশ ছিলনা। আমরা এমন অনেক কাহিনি শুনেছি, যেখানে জানতে পেরেছি মহিলাদের ছাগল কেনা, সেলাই মেশিন, খাবারের দোকান খোলা, মুদি দোকান ছোট ছোট খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট-এগুলি সবই সত্যি কারের ক্ষমতায়নের ভিত্তির ওপর নির্মিত হয়েছে। অর্থাৎ, বিষয়টি সহজ; এটা টাকা নয়। এগুলি প্রতিশ্রুতি দেওয়া নেতার বিশ্বাসযোগ্যতা। যা বছরের পর বছর ধরে ধারাবাহিক ও সততার মাধ্যমে অর্জিত আস্থা”
এছাড়াও, অমিত মালব্য বঙ্গের তৃণমূল সরকার এবং লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করে জানান, “ঠিক এই কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভান্ডারের তাঁকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। তিনি যে সামান্য অর্থ মহিলাদের দেন এবং মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী নির্বাচনের আগে যা তিনি বৃদ্ধি করতে পারেন; সে ক্ষেত্রে বিশাল মূল্য দিতে হবে। এই বিষয়টি মহিলাদের মর্যাদা এবং শারীরিক অখন্ডতাকে ক্ষুণ্ন করে। কোনও মহিলা যতই দরিদ্র বা আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকুন না কেন, কোনও আইনের আশ্রয় ছাড়াই তৃণমূলের পার্টি অফিসে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে চান না।” পাশাপাশি, অমিত মালব্য সন্দেশখালির প্রসঙ্গও উপস্থাপিত করেন।
আরও পড়ুন: মিলেছে ৪৬৫ কোটি টাকার অর্ডার! হু হু করে দাম বাড়ল এই মাল্টিব্যাগার স্টকের
তিনি বলেন, “বাংলার মহিলারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘৃণা করেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনটি তাঁকে অপসারণ করার জন্য ছিল না। কিন্তু, ২০২৬ সালে তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) মহিলাদের পুরো ক্রোধের মুখোমুখি হবেন। তাঁর সরকারের আচরণ, তাঁর দলের খ্যাতি, এবং মহিলাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ব্যালট বক্সে পরিলক্ষিত হবে।” অমিত মালব্য জানান, বাংলার মহিলারা জানেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁদের জন্য অনেক কিছু করেছেন এবং আরও অনেক কিছু করবেন। তাও আবার মর্যাদার সঙ্গে, সম্মানের সঙ্গে এবং মহিলাদের উন্নতির জন্য একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, গত শুক্রবার বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দৃপ্তকণ্ঠে জানিয়েছিলেন বিহারে জয়ের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আসার পথ প্রশস্ত হয়েছে। এর পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ২০২৬ সালেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে জঙ্গলরাজ উৎখাত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সেই দাবিকে সামনে রেখেই অমিত মালব্যও ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে “তৃণমূলের জঙ্গলরাজ থেকে পশ্চিমবঙ্গকে উদ্ধার করার” বার্তা দিয়েছেন।












