প্রকাশ্যে এসেছে ভয়ঙ্কর রিপোর্ট! স্কুলছুট রুখতে এবার অভিনব উদ্যোগ বাংলায়

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসছে একের পর এক সরকারি স্কুলের বেহাল দশার কথা। সেইসাথে পাল্লা  দিয়ে বেড়ে চলেছে স্কুলছুটদের (Dropouts) সংখ্যাও। শিক্ষক নেই, পড়ুয়া নেই, এই অবস্থায় একেবারে খাঁ খাঁ করে করছে রাজ্যের অধিকাংশ সরকারি স্কুল। যার ফলে বন্ধ হওয়ার জোগাড় অধিকাংশ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি স্কুল। রাজ্যের মাধ্যমিক স্তর থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিতে স্কুলছুটদের সংখ্যা রীতিমতো ভয় ধরাচ্ছে।

স্কুলছুট (Dropouts) রুখতে ‘বইটই-হইচই’ এর অভিনব উদ্যোগ

সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে কেন্দ্রের এক আশঙ্কাজনক রিপোর্ট। যা থেকে জানা যাচ্ছে রাজ্য সরকারের ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাবের টাকা পাওয়ার পর থেকেই স্কুল ছাড়তে শুরু করেছে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা। তবে এই সমস্ত স্কুলছুটদের (Dropouts) ভিড়েই নতুন দিশা দেখাচ্ছে আসানসোলের ‘ফুডম্যান’ বলে পরিচিত শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুন্ডুর, ‘বইটই হইচই’ নামের বিনামূল্যের কোচিং স্কুল।

শুরুটা হয়েছিল ২০১৮ সালে মাত্র তিনটি কোচিং স্কুল দিয়ে। যা বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ১৭ টিতে। এই কোচিং স্কুলগুলিতে মোট এগারোশো বাচ্চা পড়াশোনা করছে। শহর কলকাতা থেকে ঢিলছোঁড়া দূরে অবস্থিত আসানসোলের সুবিধা বঞ্চিত এলাকার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্কুলছুট (Dropouts) হওয়ার প্রবণতা ঠেকাতেই এমন অভিনব কর্মকান্ড শুরু করেছেন সেখানকারই শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুন্ডু।

চন্দ্রশেখর বাবুর মতে শহরের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে অধিকাংশ উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনা করছেন। বাকিরা বাধ্য হয়ে যাচ্ছেন সরকারি স্কুলে। কিন্তু গ্রামের দিকে ছবিটা আবার আলাদা। এখানে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল নেই। তাই গ্রামের ওই সরকারি স্কুলগুলিতে পরিবারের সব ছেলে মেয়েরাই একসঙ্গে পড়াশোনা করে। তবে গ্রামের দিকে উচ্চবিত্ত অথবা মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা নিজেরাই বাচ্চাদের পড়ান অথবা গৃহ শিক্ষক রাখেন। এর ফলে ওই সমস্ত পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় অনেকটা এগিয়ে যায়। .

ছবিটা একটু আলাদা, নিম্নবিত্ত পরিবারের নিরক্ষর-দিনমজুরদের ছেলেমেয়েদের জন্য। এই সমস্ত পরিবারের বহু ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে  পড়াশোনা করার পরিবেশ পায়না। যার ফলে পড়াশোনাতে তারা অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। আর ভবিষ্যতে তারাই পড়াশোনার ভয়ে স্কুল ছেড়ে দেয়। তাই এলাকার ছেলেমেয়েদের কথা ভেবেই স্কুলছুট (Dropouts) কমাতে ২০১৮ সালে প্রথম পাড়ায় পাড়ায় কোচিং স্কুল শুরু করেছিলেন শিক্ষক চন্দ্রশেখর বাবু। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে এই কোচিং স্কুলের সংখ্যা।

আরও পড়ুন: ‘অনৈতিক কাজের সাথে..,’ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালতে চার্জ গঠনের সময় বিস্ফোরক অর্পিতা

মোট ১৭ জন দাতা এই স্কুলের ক্লাসের পরিকাঠামো থেকে শুরু করে শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতনের দায়িত্ব নিয়েছেন। পড়াশোনার প্রতি ছাত্রদের আগ্রহ বাড়াতেই তাদের শেখানো হচ্ছে রোবট বানানো থেকে শুরু করে ‘হোম অটোমেশন’- এর কাজও। শিক্ষামূলক বিভিন্ন ভিডিও চালিয়ে চলছে পড়াশোনা।  এই কোচিং স্কুলেই রয়েছে মোট ১৫০০ টি বইয়ের লাইব্রেরী। পাশাপাশি মেয়েদের শুধু নাচ-গান নয় এখানে শেখানো হয় ক্যারাটেও। এই ক্যারাটে দলের নাম মাতঙ্গিনী বাহিনী। ৪১ একচল্লিশ জন মেয়ে বর্তমানে এই ক্যারাটে বাহিনীতে রয়েছেন। এছাড়াও আদিবাসী মেয়েদের নিয়ে তৈরি হয়েছে দুটি ফুটবল দল ‘বেঙ্গল টাইগ্রেস’।

West Bengal

তবে শুধু বাচ্চারাই নয় অভিভাবকরাও এই স্কুলে এসে পড়াশোনা করেন। অভিভাবকদের জন্য আসানসোলের বনসরাকডিহি ও কাটাগড়িয়ায় নিয়মিত ক্লাস হয়। এই দুটি স্কুলে পড়াশোনা করেন মোট ৬২ জন মা। প্রসঙ্গত এখানে বলে রাখা ভালো,আট বছর ধরে আসানসোলের কাছের ও পুরুলিয়ার গ্রামে অপুষ্টি নিয়ে কাজ করেছেন ‘ফুডম্যান’ বলে পরিচিত শিক্ষক চন্দ্রশেখর বাবু।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর