বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আর মাত্র ১১ দিন। তারপরই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো (Durga Pujo) শুরু। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র সাজো সাজো রব। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এই আবহে দুর্গাপুজোর মুখে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের নির্দেশিকা ঘিরে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। বুধবার রাতে কলকাতা পুলিশের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। নয়া পুলিশ কমিশনার (CP) মনোজ ভার্মার সই করা সেই নির্দেশিকায় জানানো হয়, আগামী ২ মাস কলকাতা শহরের একাংশে বড় জমায়েত করা যাবে না। পুজোর সময় এই নির্দেশ মানা কি করে সম্ভব? সেই প্রশ্ন ওঠে।
পুলিশের দাবি ছিল গোপন সূত্রে তারা খবর পেয়েছেন আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কলকাতার একাধিক জায়গায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সতর্ক থাকতেই এই নির্দেশ। বৃহস্পতিবার পুলিশের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) দায়ের হয় মামলা। এদিন সেই বিষয়ে শুনানি হল হাইকোর্টে।
বুধবার পুলিশ তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছিল, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কলকাতা পুলিশের থানা এলাকায় পাঁচ জনের বেশি মানুষ একসাথে চলাফেরা, দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা জমায়েত করা যাবে না। মূলত বৌবাজার থানা, হেয়ার স্ট্রিট থানা এবং ধর্মতলা এলাকায় কে সি দাস ক্রসিং থেকে ভিক্টোরিয়া হাউসের দিকের এলাকায় ৫-৬ জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না।
ওই সব এলাকার শান্তি বজায় রাখতে হবে। লাঠি বা বিপজ্জনক অস্ত্র নিয়ে যাতায়াত করা যাবে না। মানুষের গতিবিধি ও যানচলাচল বিঘ্নিত হোক এমন কিছু করা যাবে না। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে ওই সব এলাকায় কোনো জনসভাও করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে পুলিশ। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা মেনে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে পুলিশ তরফে। পুজোর আবহে এই নির্দেশিকা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায়।
শুক্রবার এই মামলার শুনানিতে রাজ্যের সওয়াল, ‘জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা নতুন কিছু নয়, ২০২৩ থেকেই এই নিয়ম লাগু আছে, প্রতি ৬ মাস অন্তর এটা পুনর্নবীকরণ হয়’। রাজ্যে আইনজীবী বলেন নির্দিষ্ট সময়কালে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা শুধু কে সি দাস থেকে ভিক্টোরিয়া হাউস এলাকা পর্যন্ত বলবৎ আছে। পাল্টা আবেদনকারীদের আইনজীবী বলেন, ‘ তাহলে এই নির্দিষ্ট এলাকায় যে পুজোগুলি হয়, সেগুলির কী হবে? তাহলে তো সেইসব পুজোর অনুমতি তো বাতিল করতে হবে’।
পাল্টা রাজ্যের আইনজীবী জানান, শুধুমাত্র ওই ৫০-৬০ মিটার এলাকার জন্যই বহাল আছে। এদিন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে এই মামলা উঠলে মামলাকারীদের উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, ‘পুলিশ যদি অনুমতি না দেয় তাহলে পুজো বন্ধ করে দিন!’ পুলিশের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের কোনও সুযোগ রয়েছে কি না, তা পরবর্তী শুনানিতে জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার এই মামলার পরবর্তী শুনানির সম্ভাবনা।
আরও পড়ুন: পুজোর আগে পকেট গরম! এক ধাক্কায় ৬০০০ টাকা বেতন বাড়ল এই রাজ্য সরকারি কর্মীদের, জারি বিজ্ঞপ্তি
প্রসঙ্গত কলকাতা পুলিশের নির্দেশিকার বিরোধিতা করে বৃহস্পতিবার দুটি মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে। একটি মামালা করা হয় আর জি কর কাণ্ডে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে। আর অন্য মামলাটি করা হয় সিপিএমের যুব সংগঠনের তরফে। আদালতে মামলাকারীদের প্রশ্ন, যেখানে কয়েকদিন পরই দুর্গাপুজো শুরু এই আবহে কিভাবে পুলিশ এমন বিজ্ঞপ্তি জারি করছে? যেই সব এলাকা নিয়ে বাধা-নিষেধ জারি করা হয়েছে সেখানে অনেকগুলি পুজো হয়। তাহলে কি এবার পুজোতে মানুষ বাড়ি থেকে বেরোবে না? তবে এদিন এই মামলার শুনানিতে কড়া অবস্থান আদালতের (Calcutta High Court)।