বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সারা জীবন স্থায়ী পদে পুরসভায় কাজ করে অবসর নিয়েছেন তাঁরা। অথচ অবসরের পরে জানানো হচ্ছে, চাকরি নাকি কখনও রেগুলার হয়নি! এই অভিযোগ নিয়েই হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হন নবদ্বীপ ও চুঁচুড়া পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত দুই কর্মী। একে প্রশাসনিক গাফিলতি, তাতে একে অপরের উপর দায় চাপিয়ে সময়ক্ষেপণ— পরিস্থিতিকে তীব্র সমালোচনায় ভরিয়ে দেন বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্ত (Justice Gaurang Kanth)। মামলার রায়ে রাজ্য ও পুরসভার ভূমিকাকে ‘দায়সারা ও অমানবিক’ আখ্যা দেন তিনি।
পেনশনের রাস্তা বন্ধ করতে পারে না সরকার
নবদ্বীপ পুরসভার স্বপন দেবনাথ ১৯৯০ সালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেন। তিন বছরের মধ্যে স্থায়ী হন। বেতন পান, সার্ভিস বুক তৈরি হয়। তবুও ২০১৭-র অবসরের পরে জানানো হয়, তাঁর চাকরি নাকি ‘রেগুলার’ হয়নি! বিচারপতি কান্ত বলেন, “কেউ যদি সারাজীবন সরকারি পরিষেবা দেন, তাঁর পেনশন রোখা সরকারের অধিকার নয়। বরং সেটা সংবিধান ও নৈতিকতার দায়।” আদালত (Calcutta High Court) নির্দেশ দেয়, আট সপ্তাহের মধ্যে তাঁর পেনশন (Pension) ও অন্যান্য সুবিধা মিটিয়ে দিতে হবে।
চুঁচুড়া মামলা থেকে উঠে এল আরও ১৪৮ জনের নাম
চুঁচুড়া পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী দিলীপ হাঁড়ি (Dilip Hari)-র ক্ষেত্রেও একই অজুহাতে পেনশন আটকে রাখে প্রশাসন। ওই মামলার শুনানিতে উঠে আসে, এমন আরও ১৪৮ জন কর্মী (Retired Civic Workers) আছেন, যাঁরা একই দুরবস্থার শিকার। বিচারপতি কান্ত নির্দেশ দেন, ছ’সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের প্রত্যেকের পেনশন চালু করতে হবে। সরকারের এমন মনোভাবকে ‘প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা ও মানবিকতা-বর্জিত আচরণ’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি।
আদালত (Calcutta High Court) স্পষ্ট জানায়, কোনও টেকনিক্যাল কারণ দেখিয়ে পেনশন আটকে রাখা যায় না। সরকার চাইলে সব কিছুর সমাধান করতে পারে। বরং এমন সমস্যায় প্রাপ্য পাওয়ার রাস্তাই প্রশস্ত করা উচিত সরকারের। স্বপন দেবনাথের (Swapan Debnath) আইনজীবী আদালতে সমস্ত নথিপত্র পেশ করলে দেখা যায়, চাকরি রেগুলার হওয়ার যাবতীয় প্রমাণ তাঁর কাছে রয়েছে। কিন্তু সরকার দাবি করে, ২০০৯ সালে ওই পদ ‘অবলুপ্ত’ হয়েছে। সেই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে আদালত (Calcutta High Court) স্পষ্ট ভাষায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
আরও পড়ুনঃ লাইনচ্যুত হতেই আগুন! বিস্ফোরণের জেরে জ্বলল তেলবাহী ট্রেন, ভাইরাল ভিডিও
আদালতের (Calcutta High Court) ধমকে নড়ল রাজ্য ও পুরসভা
এই রায় কার্যকর হলে নবদ্বীপ ও চুঁচুড়ার ১৪৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী তাঁদের বকেয়া পেনশন (Pending Pension) পেতে চলেছেন। এক আইনজীবীর কথায়, “এই রায় শুধু দু’জনের জন্য নয়। গোটা রাজ্যের পুরসভার অসংখ্য প্রাক্তন কর্মীর জন্য দিশা দেখাল হাইকোর্ট (Calcutta High Court)।” বিচারপতি কান্ত বলেন, “যে মানুষগুলো জীবনের তিন দশক পরিষেবা দিয়েছে, তাদের বৃদ্ধ বয়সে আদালতের দরজায় দাঁড় করিয়ে সরকার নিজের ব্যর্থতাকে ঢাকতে পারে না।”