বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কারগিলে (Kargil) ৫১৪০ নম্বর পোস্টে কবজা করার পর টিভিতে ‘ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর” বলে সর্বোচ্চ বলিদানি জওয়ান গোটা ভারতবর্ষের মন জয় করে নিয়েছিলেন। আজকের দিনেই বিজয়রথের সারথি বীর জওয়ান বিক্রম বত্রা (Vikram Batra) কারগিলের রণভূমিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। দেশের জন্য সর্বোচ্চ বলিদান হওয়া বিক্রম বত্রার জীবনে আরেকটিও কাহিনী আছে, যেটা ওনার ভালোবাসার কাহিনী। আসুন সামান্য কিছু জেনে নিই ওনার ব্যাপারে।
২০ বছর আগে ৭ জুলাই ১৯৯৯ সালে আজকের দিনে কারগিল হিরো বিক্রম বত্রা নিজের সাথী অফিসারদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন। ওনার মৃত্যুর পর ওনার গল্প শুনে গোটা দেশ কেঁদেছিল। কারগিল যুদ্ধের কয়েকমাস আগে বিক্রম বত্রা ছুটিতে নিজের বাড়ি পালমপুর গেছিলেন, আর সেখানে বন্ধুদের ট্রিট দিতে ন্যুগাল ক্যাফেতে নিয়ে গেছিলেন।
সেখানে ওনাকে ওনার এক বন্ধু বলেন, ‘এবার তুমি সেনায় আছো। নিজের খেয়াল রাখবে।” এরপর বিক্রম বলেন, আমার চিন্তা করোনা, আমি জিতে তিরঙ্গা উড়িয়ে আসব, আর সেই তিরঙ্গাতেই মুড়ে আমাকে বাড়িতে আনা হবে। কিন্তু আমি আসব এটা নিশ্চিত। ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রার প্রেম কাহিনীও এরকম আবেগে ভরপুর। বিক্রম একটি মেয়েকে ভালবাসত। দুজনের প্রথম দেখা কারগিল যুদ্ধের আগে ১৯৯৫ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছিল। সেখানে দুজনে ইংরেজিতে MA এর পড়াশুনা করছিলেন। দুজনের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব ছিল, আর সেই বন্ধুত্ব ভালোবাসায় বদলে গেছিল।
এরপর ১৯৯৬ এ বিক্রমের ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে সিলেকশন হয়ে যায়। এরপর তিনি দেরাদুন ছলে যান আর কলেজের পড়াশুনা ছেড়ে দেন। বিক্রম নিজের সিলেকশন নিয়ে খুবই খুশি ছিলেন। কিন্তু ওনার প্রেমিকা জানত যে, বিক্রম দূরে চলে গেলে তাদের সম্পর্কেও দূরত্ব আসবে। কারগিল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর প্রেমিকাকে বিয়ে করবে বলে জানিয়েছিলেন বিক্রম। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠেনি।
বিক্রমের প্রেমিকা তখনকার দিনের কথা মনে করে বলেন, ‘সে আর ফিরে আসেনি, গোটা জীবনের জন্য আমাকে শুধু স্মৃতি গুলো দিয়ে চলে গেছে।” একটি ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারে উনি বলেছিলেন, বত্রা দেশের সেব্য লেগে পরেছিল আর মিশনের জন্য অনেক অনেক দিন পর্যন্ত তাদের কথা হত না। বিক্রমের প্রেমিকা বলে, ‘আমাকে ও সবসময় বিয়ের কথা বলত।”
বিক্রমের প্রেমিকা বলে, একসময় আমি ওকে বিয়ের কথা বলি, কারণ আমার বাড়ি থেকে খুব চাপ দেওয়া হচ্ছিল। এরপর বিক্রম কিছু না শুনেই একটি ব্লেড দিয়ে নিজের আঙুল কেটে আমার সিঁথি ভরে দেয়। এরপর আমি বিক্রমকে বলি এটা পুরো সিনেমার মতো হল। প্রেমিকা বলে, আমার আফসোস হল যে তাঁর কৃতিত্ব এবং আনন্দময় মুহুর্তগুলি স্মরণ করার জন্য আমার ভালোবাসা আমার সাথে ছিলোনা। আজ আমাদের কাছে অনেক প্রেম কাহিনীই আছে, কিন্তু বিক্রমের মতই কোন ভারতীয় সেনা জওয়ানের প্রেম কাহিনী আমাদের চোখে জল এনে দেয়।
বিক্রম বত্রাকে পরমবীর চক্রে সন্মানিত করা হয়েছিল। এই সন্মান ওনাকে ১৯৯৯ সালে মরণোত্তর দেওয়া হয়েছিল। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তিনি দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ বলিদান দেন। হিমাচল প্রদেশের পালমপুরে ১৯৭৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিক্রম বত্রা। ১৯ জুন ১৯৯৯ সালে বিক্রম বত্রার নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান আর্মি পাকিস্তানিদের কাছ থেকে ৫১৪০ নং পোস্ট ছিনিয়ে নেয়। ওই পোস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর স্ট্যাটের্জিক ছিল।
ওই পোস্ট থেকে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীরা ভারতীয় সেনার উপর গুলি চালাচ্ছিল। আর এই পোস্টে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করার পর বিক্রম ৪৮৭৫ নং পোস্ট জয়ের জন্য চলে যায়। ওই পোস্ট সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় ছিল।
৭ জুলাই ১৯৯৯ সালে এক আহত অফিসারকে বাঁচাতে গিয়ে বিক্রম বত্রা প্রাণ হাআন। ওই অফিসারকে বাঁচানোর সময় ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রা বলেছিলেন, ‘তুমি চলে যাও, তোমার বৌ-বাচ্চা আছে।” বিক্রম বত্রার সঙ্গী নবীন ওনার সাথেই বাঙ্কারে ছিল। নবীন বলেন, আচমকাই একটি বোমা আমাদের পাশে এসে ফেটে যায়। আমি আহত হয়ে গিয়েছিলাম। বিক্রম তখনই আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এরফলে আমি বেঁচে যাই, কিন্তু বিক্রম আর ফিরে আসেনা। দেশের মাটি রক্ষা করতে গিয়ে সে নিজের প্রাণ দিয়ে দেয়। ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রার বীরত্বের কাহিনী শুধু ভারতেই না, পাকিস্তানেও বিখ্যাত। পাকিস্তানি সেনা বিক্রম বত্রার নাম দিয়েছিল ‘শের শাহ”