রমরমিয়ে চায়না আলোর দাপাদাপিতে কমছে মাটির প্রদীপের চাহিদা,মাথায় হাত মৃৎ শিল্পীদের

সৌতিক চক্রবর্তী,বোলপুর,বীরভূমঃ সামনেই দীপাবলি। আর দীপাবলি মানেই ঘর ভরতি আলোর ঝলকানি। কোথাও টুনি বাল্বের চেইন তো কোথাও আবার প্লাস্টিকের প্রদীপ। কিন্তু এইসব আধুনিক জিনিসের বাজার যখন রমরমিয়ে তখন বাজার হারাতে বসেছে মাটির প্রদীপ। আর দীপাবলি তে যখন সবার ঘর আলোর ঝলকানিতে ভরে ওঠে তখন সীতারাম পণ্ডিত,সরজু’র বাড়ি থাকে অন্ধকার।

IMG 20191022 095629
ছবিঃ মাটির প্রদীপ তৈরিতে ব্যস্ত সীতারাম পণ্ডিত।

কালীপুজো এলেই ঘর আলো করতে মাটির প্রদীপের চাহিদা বেশ থাকত। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে গৃহস্থরা ঝুঁকেছেন বাহারি বৈদ্যুতিক সস্তা আলোর দিকে। এই কারণেই মাটির প্রদীপের কদর নিচে নেমে আসে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কালীপুজোর মুখে চিন্তায় বীরভূম জেলার কুমোরেরা। মাটির প্রদীপের কদর কমতে থাকায় এই কাজ ছেড়ে অনেকেই অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন। তেমনি কোন,কোন কুমোরের চাকা ঘুরলেও বাজারের হাল খারাপ। আলোর উৎসব তথা দীপাবলিতে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে মাটির প্রদীপ। প্রদীপের চাহিদা কমলেও হাল ছাড়েননি জেলার অনেক মৃৎশিল্পী। পুজোর নানা উপকরণের সঙ্গে মাটির তৈরি প্রদীপ তৈরি করে আসছেন বংশ পরম্পরায়। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক বৈদ্যুতিক বাতি বাজারে চলে আসায় প্রাচীন সেই মাটির প্রদীপ হারিয়ে যেতে বসেছে। বাজারে প্রদীপের কম চাহিদা থাকায় প্রায় বন্ধের মুখে এই শিল্প। জেলার বিভিন্ন গ্রামের বহু কুমোর পরিবার আগে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল এখন তা কমেছে। মৃৎশিল্পীরা দীপাবলিকে সামনে রেখে ব্যস্ত নানা ধরনের প্রদীপ তৈরি করতে।

IMG 20191022 083053
ছবিঃ চিন্তিত মৃৎশিল্পী।

বাজারের হাল খারাপ থাকায় মাটির প্রদীপ কারিগর সীতারাম পণ্ডিত জানান,“আমাদের খুব একটা বেচাকেনা হচ্ছে না। চায়না আলোর জন্য বেচাকেনা অনেক কম। আগে যে হারে বিক্রি হতো এখন তা অনেক কম। তবুও আমরা প্রদীপ তৈরি করি। কিছু বিক্রি হলেও অনেক থেকে যায়। আমরা যেভাবে পরিশ্রম করে তৈরি করি সেইভাবে লাভ হয় না।” বিক্রি যাতে আরোও বাড়ে। যাতে দুটো পয়সার মুখ দেখতে পায় সেই আশায় এখনো এইভাবেই দীপাবলির আগে প্রদীপ তৈরি করে যায় সীতারাম।

IMG 20191022 095621

সরজুবাবু বলেন,“ চায়না এলইডি বাল্ব যে হারে বাজারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কম দামে তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না মাটির প্রদীপ। খড়ি,মাটি ইত্যাদি সরঞ্জামের দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে প্রদীপ তৈরি করে সে হারে টাকা উঠছে না।”

কিন্তু এই প্রদীপের চাহিদা কেন কম তা জানালেন এক কারিগর। তিনি জানান,“প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়ি আলোকিত করতে প্রথমত ৮০ টাকায় একশো প্রদীপ কেনার পর তাতে প্রায় এক কেজি সরষের তেল লাগবে। আধুনিক আলোর খরচ সে তুলনায় কম। তাই প্রদীপের চাহিদা কমছে।”

দেখুন ভিডিও।


সম্পর্কিত খবর