বাংলা হান্ট ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইউক্রেনের বহু মানুষ জীবন বাঁচাতে তাঁদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হন। এমনকি, সেই সময়ে অবস্থা এতটাই বেগতিক হয়ে যায় যে, অনেকেই তাঁদের পোষ্যকেও সাথে নিয়ে যেতে পারেননি। সম্প্রতি ঠিক সেইরকমই এক ঘটনা এবার সামনে এসেছে। যেখানে, তাড়াহুড়ো করে শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় একটি কুকুরকে একা ফেলে যান পরিবারের সদস্যরা।
এমতাবস্থায়, ওই পরিবার পোষ্য কুকুরটিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেও সেই কুকুরটি কিন্তু তাঁরা চলে যাওয়ার পরও মাসের পর মাস তাঁদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। প্রবল যুদ্ধের আবহে যেখানে প্রতি মুহূর্তেই ছিল বিপদের হাতছানি ঠিক সেই সময়েও কুকুরটি তার প্রিয়জনদের অপেক্ষায় ছিল। এদিকে, মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ইউক্রেনের বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সী ক্যাটারিনা টাইটোভা তাঁর স্বামী আলেকজান্ডার এবং দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁদের শহর হোস্টোমাল ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। যদিও, ওই পরিবারের সাথে হাস্কি ব্রিডের ওই পোষ্য কুকুরটিও থাকত।
মূলত, গত মার্চ মাসে, ওই পরিবার তাঁদের বাড়ি এবং শহর ছেড়ে চলে যান। সেই সময় যুদ্ধের পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। পাশাপাশি, তখন রাশিয়া, ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরগুলি দখল করতে শুরু করেছিল। এমতাবস্থায়, ওই কুকুরটিকে কার্যত বাধ্য হয়েই ফেলে যেতে হয় তাঁদের।
কুকুরটির বাঁচার কোনো আশা ছিল না:
জানা গিয়েছে, ওই পরিবারটি Vinnytsia শহরে পরিচিতদের বাড়িতে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। পাশাপাশি, তখন থেকেই তাঁরা যুদ্ধ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। এই প্রসঙ্গে অডিটি সেন্ট্রালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবারটি তাঁদের পোষ্য কুকুরটিকে নিয়েও চিন্তিত ছিল। প্রথমে তাঁরা মনে করেছিলেন যে, বেইলি (কুকুরটির নাম) নিরাপদেই থাকবে। কিন্তু যখন সময়ের সাথে সাথে ধ্বংসলীলা বাড়তে থাকে, তখন বেইলির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নিয়ে তাঁদের মনে সংশয় তৈরি হয়। এমতাবস্থায়, যুদ্ধ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর, ক্যাটরিনা ৪ মাস পর তাঁর পরিবারের সাথে ফের নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। আর সেখানে ফিরেই তিনি রীতিমতো অবাক হয়ে যান। কারণ, তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে পোষ্য কুকুরটি তখনও গভীর আগ্রহে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে। যা দেখে তিনি কেঁদেও ফেলেন।
কুকুরটি অপেক্ষা করেছে:
ক্যাটরিনার মতে, বেইলিকে দেখে তাঁর পুরো পরিবারের চোখে জল চলে আসে। পাশাপাশি, এটি তাঁদের কাছে একটি অলৌকিক ঘটনা বলে মনে হয়েছিল। ক্যাটরিনা জানান, ফেরার পর শহরের অবস্থা দেখে তিনি কাঁদতে শুরু করেন। সেখানে সবকিছুই তছনছ হয়ে গেছিল। এমন পরিস্থিতিতে, স্বাভাবিকভাবেই সবার মন খারাপ হয়ে যায়। পাশাপাশি, তিনি ভেবেছিলেন যে, বেইলিও হয়তো আর বেঁচে নেই। কিন্তু যখনই তিনি দেখলেন যে, বেইলি তখনও তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন তাঁর মনে হয়েছিল, তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুখ খুঁজে পেয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শহরে ঘটা ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলার সময় সাইবেরিয়ান হাস্কি জাতের ওই কুকুরটি কোথাও লুকিয়ে ছিল এবং কোনোমতে বেঁচে ছিল। পাশাপাশি, সে নিশ্চয়ই ভেবেছিল যে, তার পরিবার সেখানেই আছে। তাই সে তাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এদিকে, এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হতে শুরু করেছে নেটমাধ্যমে। যেখানে পুরো বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি, ওই ভিডিও দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরা।