প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আম্বানি! এই মন্দিরের ভক্ত প্রত্যেকেই! এখানে এসেই চূর্ণ হয় ঔরঙ্গজেবের অহংকারও

বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের দেশের প্ৰতিটি প্রান্তেই রয়েছে হাজার হাজার মন্দির (Temple)। তবে, সেই মন্দিরগুলির মধ্যে আবার এমন কিছু মন্দির রয়েছে যেগুলি সম্পর্কে প্রচলিত রয়েছে বিভিন্ন চমকপ্রদ কাহিনি। সেগুলি জানার পর রীতিমতো অবাক হয়ে যান প্রত্যেকেই। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্ৰতিবেদনে আজ আমরা ঠিক সেইরকমই এক মন্দিরের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব। ওই মন্দিরটির নাম হল শ্রীনাথজি মন্দির (Shrinathji Temple)। ভক্তদের ভিড় সবসময় পরিলক্ষিত হয় এই জাগ্রত মন্দিরে। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) যখনই রাজস্থানে যান তখনই তিনি শ্রীনাথজির দরবারে যেতে ভোলেন না। পাশাপাশি, এই মন্দিরের ভক্তদের তালিকায় রয়েছেন ভারত তথা এশিয়ার সবথেকে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানিও (Mukesh Ambani)।

আম্বানি পরিবার যেকোনো শুভ কাজের আগে এই মন্দিরে আসেন। পাশাপাশি, আম্বানি পরিবার তাদের মেয়ের বিয়েতে শ্রীনাথজিকে প্রথম আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আরাবল্লির কোলে বনস নদীর তীরে নাথদ্বারায় শ্রীনাথজির বিশাল মন্দির রয়েছে। নাথদ্বারাকে শ্রীনাথজির শহরও বলা হয়। এই মন্দিরে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ একটি প্রাসাদের মতো বাড়িতে বাস করেন।

এদিকে, নাথদ্বারায় প্রতিষ্ঠিত ভগবান শ্রীনাথজির মন্দিরকে ঘিরে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনাও প্রচলিত রয়েছে। এখানকার দেবতা নিজেই ভগবান বিষ্ণুর অবতার। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, ভগবান কৃষ্ণের বয়স যখন সাত বছর ছিল তখন তিনি এখানে বসবাস করতেন। এই মন্দিরে উপস্থিত শ্রী কৃষ্ণের কালো রঙের মূর্তিটি একটিমাত্র পাথর দিয়েই তৈরি হয়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে, এখানে চালের দানার মাধ্যমে ভগবান ভক্তদের কাছে আবির্ভূত হন। তাই ভক্তরা মন্দিরে চাল নিয়ে যান। শ্রীনাথজির দর্শনের পর ভক্তরা এই চালগুলি তাঁদের টাকা রাখার স্থানে রেখে দেন, যাতে বাড়িতে অর্থের অভাব না হয়।

আরও পড়ুন: জি বাংলার মহালয়ায় এই দেবী সাজছেন দিব্যানি, নতুন রূপে ফুলকিকে দেখে মুগ্ধ নেটপাড়া

শ্রীনাথজি চূর্ণ করেছিলেন ঔরঙ্গজেবের অহংকার: এই মন্দিরের ইতিহাস জানলে চমকে উঠবেন প্রত্যেকেই। কথিত আছে যে, ঔরঙ্গজেব যখন এই মন্দিরটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন তখন ভগবান তাঁকে সেখানেই উচিৎ শিক্ষা দিয়েছিলেন। মুঘল শাসক ঔরঙ্গজেব সম্পর্কে ইতিহাসে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তিনি মূর্তি পূজার বিরোধী ছিলেন। পাশাপাশি, তিনি দেশের বহু মন্দিরও ধ্বংস করেছিলেন। এমতাবস্থায়, তিনি মথুরায় বালরূপ শ্রীনাথজির মূর্তিও ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: ভগবানের সঙ্গেও ছলচাতুরি! মন্দিরকে ১০০ কোটির চেক দিলেন ভক্ত, টাকা তুলতে গিয়ে যা হল! জেনে ভিরমি খাবেন

তাঁর নির্দেশে মথুরা জেলায় অবস্থিত শ্রীনাথজির মন্দির ভাঙার কাজ শুরু হয়। কিন্তু কথিত আছে যে, ঔরঙ্গজেবের সৈন্যরা ভগবানের মূর্তি ভাঙার বা কোনো ক্ষতি করার আগেই মন্দিরের পুরোহিত দামোদর দাস বৈরাগী মূর্তিটিকে মন্দির থেকে বের করে নিয়ে যান। তিনি একটি গরুর গাড়িতে শ্রীনাথের মূর্তি স্থাপন করেন এবং তারপরে একাধিক রাজাকে শ্রীনাথজির মন্দির স্থাপনের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু ঔরঙ্গজেবের ভয়ে সেইসময় এই প্রস্তাব কেউ গ্রহণ করেনি।

From Modi to Ambani! Everyone is a devotee of this temple

শেষপর্যন্ত দামোদর দাস বৈরাগী মেওয়ার রাজা রানা সিংকে এই বার্তা পাঠান। তিনি সেই মূর্তি রাখতে সম্মত হন। রানা রাজ সিং ঔরঙ্গজেবকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ করে জানিয়েছছিলেন যে, তাঁর রাজত্বকালে কেউ গরুর গাড়িতে রাখা শ্রীনাথজির মূর্তি স্পর্শ করতে পারবে না। ১৬৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হয় এবং নিয়ম মেনে শ্রীনাথজির মূর্তি সেখানে স্থাপন করা হয়।

From Modi to Ambani! Everyone is a devotee of this temple

ঔরঙ্গজেব প্রত্যক্ষ করেন অলৌকিক ঘটনা: এদিকে, ঔরঙ্গজেবের নজর এই মন্দিরের দিকে ছিল। একবার তিনি তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে মন্দির ভাঙার জন্য পৌঁছে গেলেও মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করতেই তাঁর দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। এই ঘটনায় তিনি খুব ভয় পেয়েছিলেন। এমনকি, তিনি তৎক্ষণাৎ শ্রীনাথজির কাছে তাঁর পাপের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। এরপর তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসে এবং তিনি তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে সেখান থেকে ফিরে যান।

From Modi to Ambani! Everyone is a devotee of this temple

প্রাচীন বিশ্বাস অনুসারে, ঔরঙ্গজেবের মা যখন এই পুরো ঘটনাটি জানতে পারেন, তখন তিনি শ্রীনাথজির শৃঙ্গারের জন্য একটি বহুমূল্যের হিরে উপহার দেন। এরপর যখনই কোনো সাধারণ বা বিশেষ ব্যক্তি মেওয়ারের মাটিতে পা রাখেন তখন তিনি নাথদ্বারার এই মন্দির দর্শন করতে ভোলেন না।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর