প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখেই শেখাচ্ছেন জেতার মন্ত্র! চিনে নিন দেশের প্রথম দৃষ্টিহীন IAS অফিসারকে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: চোখের মাধ্যমে দেখা যায় পৃথিবীর আলো। কিন্তু জীবনে ছড়িয়ে থাকা অন্ধকার দূর করার কাজটা হয় মনের চোখ দিয়ে। আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে হয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার। কিন্তু, তাঁদের অফুরন্ত মনের জোরকে সম্বল করেই তাঁরা এগিয়ে যান জীবনযুদ্ধে। আর সেখানে তাঁরা জয়লাভও করেন। বর্তমান প্রতিবেদনেও আমরা এমন একজনের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যিনি দৃষ্টিহীন হয়েও দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষায় সফলতা লাভ করে হয়েছেন IAS অফিসার। পাশাপাশি, তিনি পেয়েছেন দেশের প্রথম দৃষ্টিহীন IAS অফিসারের তকমাও। আর এভাবেই সমস্ত বাধা এবং প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এক অনন্য উত্তরণের কাহিনি রচনা করেছেন এই লড়াকু মহিলা। যাঁর নাম হল প্রাঞ্জল পাটিল।

চিনে নিন প্রাঞ্জল পাটিলকে:
মহারাষ্ট্রের উল্লাসনগরে জন্ম নেওয়া প্রাঞ্জল মাত্র ৬ বছর বয়সেই তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারান। কিন্তু, এই ঘটনাতেও ভয় পাননি তিনি। বরং, সাহস অবলম্বনের মাধ্যমে মনের জোরকে সম্বল করেই তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন। মূলত, তিনি চেয়েছিলেন তাঁর কাজের মাধ্যমে ভবিষ্যতকে আলোকিত করতে। আর সেই কাজেই তিনি সফল হয়েছেন। শুধু তাই নয়, আজ তিনি দেশের অন্যতম একজন দক্ষ প্রশাসক হয়ে উঠেছেন।

“আমি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছি কিন্তু পড়ার আগ্রহ হারাইনি”:
ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে প্রাঞ্জলের দৃষ্টিশক্তি চলে গেলেও তিনি চালিয়ে গিয়েছিলেন পড়াশোনা। তিনি মুম্বাইয়ের দাদারে শ্রীমতি কমলা মেহতা স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। এই স্কুলটিতে দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা পড়াশোনা করে। প্রাঞ্জল এখানে ব্রেইলের মাধ্যমে পড়াশোনা শেষ করেছেন। এখান থেকে দশম শ্রেণি পাশ করার পর, প্রাঞ্জল চান্দাবাই কলেজ থেকে কলা বিভাগে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি মুম্বাইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যান।

“UPSC পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই”:
স্নাতকস্তরে পড়াকালীন প্রাঞ্জল তাঁর এক বন্ধুর কাছ থেকে UPSC পরীক্ষার ব্যাপারে জানতে পারেন। তারপরেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, এই পরীক্ষাটি তিনি দেবেন। যদিও, এই ব্যাপারে তিনি কাউকে কিছু জানাননি। পাশাপাশি UPSC-র প্রস্তুতির জন্য, তিনি একটি উপায় খুঁজে বের করেন এবং জব অ্যাক্সেস উইথ স্পিচের সাহায্য নেন। মূলত, এটি হল দৃষ্টিহীনদের জন্য একটি বিশেষ সফ্টওয়্যার। যদিও, প্রাঞ্জল এরই মাঝে তাঁর উচ্চশিক্ষাও জারি রেখেছিলেন। এমনকি তিনি, এমফিল করার পর পিএইচডি করারও সিদ্ধান্ত নেন।

অবশেষে মেলে সাফল্য:
UPSC পরীক্ষায় সফলতা লাভের জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন। তবে, সবচেয়ে বিশেষ বিষয় হল, তিনি এই পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোনো কোচিং নেননি। প্রাঞ্জল শুধুমাত্র ওই বিশেষ সফ্টওয়্যারের সাহায্যে তাঁর পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এছাড়াও, প্রাঞ্জল একাধিক মক টেস্ট দিতে থাকেন।

EG0pZd9UYAIYX2f 609d0bd1777a0

২০১৬ সালে, প্রাঞ্জল UPSC-র পরীক্ষায় প্রথমবারের চেষ্টায় সফল হন এবং সর্বভারতীয় স্তরে ৭৭৩ তম স্থান অর্জন করেন। যদিও, দৃষ্টিহীন হওয়ার কারণে তিনি ভারতীয় রেলওয়ে অ্যাকাউন্টস সার্ভিসে যোগ দিতে পারেননি। তবে, তিনি থেমে না থেকে দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় ১২৪ তম স্থান অর্জন করেন। এর পাশাপাশি প্রাঞ্জল ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবার জন্য নির্বাচিত হন। আপাতত তিরুবনন্তপুরমের ডেপুটি কালেক্টর পদে উন্নীত হওয়ার আগে প্রাঞ্জল কেরালার এর্নাকুলামে সহকারী কালেক্টর হিসাবে কাজ করেছিলেন। এদিকে, প্রাঞ্জলের এই জীবনযুদ্ধের কাহিনি সামনে আসতেই তাঁকে কুর্ণিশ জানাচ্ছেন সকলেই।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর