বাংলা হান্ট ডেস্কঃ করোনা আবহে একদিকে যেমন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে অনেক সামাজিক সম্পর্ক। দূরত্ব বাড়ছে মানুষে মানুষে তেমনি আবার একই সঙ্গে এই অন্ধকারে আলোর পথ দেখাচ্ছেন অনেকেই। কোথাও এগিয়ে আসছে ক্লাস টুয়ের অভিপ্সা, কখনো এগিয়ে আসছেন সুদূর কাঁথির শিক্ষক শ্যামল জানা। আবার কখনো সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন হাওড়ার বালির শিবু চক্রবর্তী লেনের রজনী চট্টোপাধ্যায়। চল্লিশোর্ধ রজনী ৯০% প্রতিবন্ধী। জীবন বলতে হুইল চেয়ার। কিন্তু ৯০% প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে দিতে রয়েছে তার ১০০% মনের জোর। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে কখনো ইচ্ছাশক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বোধহয় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, স্মরণীয় বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস, অসামান্য লেখক হেলেন কেলার, সাঁতারু বুলা চক্রবর্তীরা। এবার সেই তালিকায় যোগ দিলেন বালির রজনী।
করোনা যখন একে একে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করে দিয়েছে প্রতিটি মানুষকে, তখনই সমস্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় দূরে ঠেলে মানুষের পাশে এগিয়ে এলেন রজনী। বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় তার পক্ষে। কিন্তু মহামারীর আবহে তার নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে সারা বিশ্বকে হাতে এনে দেওয়া মোবাইল ফোনটি। আর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই কোভিড রোগীদের নানা সমস্যা সম্পর্কে জেনে নিচ্ছেন তিনি। আর তারপর তাদের পৌঁছে দিচ্ছেন আশপাশের স্বেচ্ছাসেবীদের ফোন নম্বর। কখনো কখনো বা সংগঠনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন রোগীদের ঠিকানা। চরম দুঃসময়ে এতে করে নানা সাহায্য পাচ্ছে রোগীরা। শুধু তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়া উপচে পড়ছে ধন্যবাদে।
তবে ধন্যবাদের জন্য নয় রজনী কাজ করে চলেছেন তার মনের ইচ্ছেতে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোন ভাবেই সাহায্য করা যায় মানুষকে। আর সেই কথা আরেকবার প্রমাণ করছেন বালির রজনী। এক সময় তার জীবন কেটেছে ক্রীড়াবিদ হিসেবে। তারপর ভুল চিকিৎসার জন্য সারা জীবনের মতো পঙ্গু হয়ে যেতে হয় তাকে। হয়তো এখানেই ভেঙে যেতে পারত সমস্ত স্বপ্ন। কিন্তু পরাজয় কখনো শেষ করে দিতে পারে না একজন ক্রীড়াবিদকে। সে কতই আরো একবার প্রমাণ করে দেখালেন রজনী। সঙ্গীত ভালোলাগায় একসময় তিনি হয়ে উঠেছিলেন রেডিও লিসেনার্স সংগঠনের সভাপতি। সেই তাকেই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা শুরু। কনুই থেকে হাতের আঙুল পর্যন্ত সক্রিয় থাকায় মোবাইল ব্যবহারে কোন অসুবিধা হয় না তার। আর সেইটুকুতেই পাথেয় করে এগিয়ে চলেছেন রজনী। সে আশপাশের এলাকায় হোক বা সুদূর বর্ধমান, খবর পেলেই রোগীদের কাছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নম্বর পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। প্রতিমুহূর্তে রজনী চট্টোপাধ্যায় ফের একবার দেখিয়ে দিচ্ছেন ইচ্ছা থাকলেই বলতে পারা যায়, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।