বাংলা হান্ট ডেস্ক: ইয়েমেনে (Yemen) সক্রিয় হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে (Red Sea) ইজরায়েলের (Israel) সাথে যেকোনো ধরণের সংযোগ রয়েছে এমন জাহাজগুলিতে ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে। এই আবহেই নরওয়ের ট্যাঙ্কার স্ট্রিন্ডাতে অ্যান্টি শিপ মিসাইল দ্বারা আক্রমণও করা হয়। এমতাবস্থায়, ওই হামলার ফলে স্ট্রিন্ডা ট্যাঙ্কারে আগুন লেগে যায়। তবে, কেউ হতাহত হননি। এদিকে, হুথি বিদ্রোহীরা দাবি করেছে যে, ওই ট্যাঙ্কারটি ইজরায়েলে অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করে ফিরে আসছে।
যদিও, ট্যাঙ্কারটির মালিক মউইনকেল কেমিক্যাল ট্যাঙ্কারস জানিয়েছে যে, ওই জাহাজটি জৈব জ্বালানিতে ব্যবহৃত পাম তেলের একটি কার্গো নিয়ে ইতালির দিকে যাচ্ছিল। উল্লেখ্য যে, এর আগেও হুথি বিদ্রোহীরা আমেরিকার একটি যুদ্ধজাহাজকে টার্গেট করেছিল। যদিও, সেই হামলা ব্যর্থ হয়। এমন পরিস্থিতিতে হুথি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সমগ্ৰ লোহিত সাগর ভারত সহ সারা বিশ্বের জন্য বিপদের আবহ তৈরি করেছে।
সবথেকে বড় বিষয় হল, হুথি বিদ্রোহীরা ইজরায়েলের সাথে যুক্ত রয়েছে বলে দাবি করে যেকোনো জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। হুথি বিদ্রোহীদের কাছে শতাধিক অ্যান্টি শিপ মিসাইল রয়েছে। যেটি একটি যুদ্ধজাহাজকেও টার্গেট করতে পারে। এমতাবস্থায়, ওইসব ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে সাধারণ ট্যাঙ্কার বা পণ্যবাহী জাহাজ কিছুই করতে পারে না। জানিয়ে রাখি যে, হুথি বিদ্রোহীরা রীতিমতো প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেছে যে, যতক্ষণ ইজরায়েল গাজা উপত্যকায় খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে ততক্ষণ ইজরায়েলের বন্দরগামী জাহাজগুলিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হবে।
হুথিদের হামলার বিষয়ে মার্কিন নৌবাহিনী কি জানিয়েছে: সামগ্রিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একজন মার্কিন আধিকারিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন যে, লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরকে সংযুক্তকারী বাব আল-মান্দাব প্রণালী থেকে প্রায় ৬০ নটিক্যাল মাইল (১১১ কিমি) উত্তরে ২১০০ GMT-তে ট্যাঙ্কার স্ট্রিন্ডায় হামলা হয়। পাশাপাশি, দ্বিতীয় একজন মার্কিন আধিকারিক জানিয়েছেন যে, ওই হামলার কয়েক ঘন্টা পরে স্ট্রিন্ডা তার নিজস্ব ক্ষমতার অধীনে চলতে সক্ষম হয়েছিল। পাশাপাশি, আমেরিকা সেনার সেন্ট্রাল কমান্ড জানিয়েছে, “ওই আক্রমণের সময়ে আশেপাশে কোনো মার্কিন জাহাজ ছিল না। কিন্তু ইউএসএস মেসন এম/টি ((ইউএস নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার) স্ট্রিন্ডার বিপদের প্রসঙ্গে সাড়া দিয়েছিল এবং বর্তমানে সহায়তা প্রদান করছে।”
আরও পড়ুন: চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুখবর! কর্মী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করল এই ব্যাঙ্ক, এভাবে করুন আবেদন
হুথিদের হামলার প্রসঙ্গে চিন্তায় রয়েছে ভারত: লোহিত সাগর এলাকায় হুথি বিদ্রোহীদের হামলার বিষয়টি ভারত-ইজরায়েল বাণিজ্যের জন্যও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, শীঘ্রই সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে ভারতীয় বাণিজ্যিক জাহাজগুলিকে অন্য কোনো পথ খুঁজতে হবে। এই সঙ্কটের কারণে, জাহাজের মালিকরা শুধুমাত্র যে সেই অঞ্চল দিয়ে ট্রানজিট করার অনুমতি দেবেন না তা নয়, পাশাপাশি জাহাজের ক্রু-রাও এই ঝুঁকি নিতে অস্বীকার করতে পারেন।
উল্লেখ্য যে, ভারত ও ইজরায়েলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। ইজরায়েলে মোট ছয়টি বড় বন্দর রয়েছে, যেখান থেকে বছরে প্রায় ১০,০০০ জাহাজ আসে। এমন পরিস্থিতিতে, ওই জাহাজের সংখ্যা কমতে পারে। এর ফলে সরাসরি ক্ষতি হবে ইজরায়েলের আমদানি-রফতানিতে। ইজরায়েল ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যও আমদানি করে।
ভারতকে কি সাহায্য করবে ইরান: হুথি বিদ্রোহীদের ওপর ইরানের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ইরান ওই বিদ্রোহীদের অস্ত্র, সরঞ্জাম, খাদ্য, অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। বিনিময়ে, ইরান তার ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য হুথি যোদ্ধাদের ব্যবহার করে। তাই, ইরানের নির্দেশে হুথি বিদ্রোহীরা ভারতীয় জাহাজে হামলা থেকে সরে আসতে পারে। কিন্তু, ইরান এত খোলামেলাভাবে এগিয়ে আসবে কিনা সেই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। ভারতের সঙ্গে ইরানের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তবে, দেশটি ইজরায়েলের বিষয়ে যেকোনো ধরণের চুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের ভারতকে সাহায্য করার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।