বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারত ও আমেরিকার (America-India) মধ্যে চলমান ট্রেড ডিল সংক্রান্ত আলোচনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিতাদেশ ঘোষণা করেছিলেন। যার মেয়াদ আগামী ৯ জুলাই শেষ হচ্ছে। এদিকে, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ভারত কোনও চাপের মুখে ট্রেড ডিলে প্রবেশ করবে না। অর্থাৎ, সোজা কথায় এই চুক্তিটি তখনই হবে যখন এটি সম্পূর্ণরূপে ভারতের স্বার্থে হবে। ট্রাম্প যখন শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন, তখন বিশ্ব এবং ভারতীয় বাজার চাপের মধ্যে পড়েছিল। এমতাবস্থায়, চলুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের জন্য এই চুক্তি কতটা প্রয়োজনীয় এবং শেয়ার বাজারে এর প্রভাব কী হবে?

ভারত-আমেরিকার (America-India) ট্রেড ডিলে কীভাবে প্রভাবিত হবে শেয়ার বাজার:
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, সম্প্রতি ভারতীয় দল ওয়াশিংটন থেকে আলোচনার পর ফিরে এসেছে।PTI-এর এক রিপোর্ট অনুসারে, দুই দেশের (America-India) মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন ট্রেড ডিল তথা বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কৃষি ও অটো সেক্টরের কিছু সমস্যা এখনও সমাধান করা বাকি। যদি এই সমস্যাগুলির সমাধান করা হয়, তাহলে একাধিক ভারতীয় সেক্টর এর থেকে উপকৃত হতে পারে।
শেয়ার বাজারে এর প্রভাব কী হবে: বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারত ও আমেরিকার (America-India) মধ্যে ট্রেড ডিল চূড়ান্ত হলে শেয়ার বাজারে উত্থান দেখা যেতে পারে। আনন্দ রাঠি গ্রুপের চিফ ইকোনমিস্ট সুজন হাজরা জানিয়েছেন যে, এই চুক্তিটি মূলত ভারতীয় বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে। এর ফলে ভারতীয় শেয়ার বাজারে অর্থ আসবে এবং রুপির ভ্যালুও শক্তিশালী হতে পারে। কিন্তু, যদি চুক্তিটি প্রত্যাশা পূরণ না করে, তাহলে বাজারে অস্থিরতা বাড়তে পারে। বিশেষ করে টেক্সটাইল এবং ফার্মার মতো রফতানি ভিত্তিক সেক্টরগুলি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
আরও পড়ুন: নিয়ম লাগু হতে না হতেই শুরু জালিয়াতি! রেলের টিকিটে ফের “কালোবাজারি”, কীভাবে হচ্ছে?
কোন কোন সেক্টরকে গুরুত্ব দেওয়া হবে: বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রেড ডিল থেকে আইটি থেকে শুরু করে ফার্মাসিউটিক্যালস, অটো কম্পোনেন্ট, ইলেকট্রনিক্স এবং টেক্সটাইল সেক্টর সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে। ২০২৩ সালে, ভারত আমেরিকায় প্রায় ৯.৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের টেক্সটাইল এবং ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ফার্মা রফতানি করেছিল। ইলেকট্রনিক্স সেক্টর থেকেও ৬.৬ বিলিয়ন ডলারের রফতানি হয়।শুল্ক কমানো হলে, এই সেক্টরগুলির বৃদ্ধি আরও বাড়তে পারে। INVasset PMS-এর বিজনেস হেড হর্ষল দাসানি জানিয়েছেন যে, টেক্সটাইল থেকে শুরু করে ফার্মা এবং ইলেকট্রনিক্স বাজারে আরও সুযোগ পাবে। তবে, কৃষি ও ডেয়ারি সেক্টরে চ্যালেঞ্জগুলি অব্যাহত থাকতে পারে। কারণ শুল্ক কাঠামো এখনও একটি বড় সমস্যা। এছাড়াও, এই চুক্তির ফলে FDI (প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ)ও বৃদ্ধি পেতে পারে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে FDI ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সার্ভিস সেক্টর এর একটি বড় অংশ পেয়েছে।
আরও পড়ুন: ৩৬ টি চালেই করলেন বাজিমাত! ক্রোয়েশিয়ায় শিরোপা জিতলেন ডি. গুকেশ
বিনিয়োগকারীদের কী করা উচিত: মিন্ট-এর এক রিপোর্টে, বোনানজার সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট নীতিন জৈন পরামর্শ দিয়েছেন যে, বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকা উচিত। ব্যাঙ্কিং এবং এফএমসিজির মতো ডোমেস্টিক সেক্টরে বিনিয়োগ নিরাপদ হতে পারে। কারণ বিশ্বব্যাপী উত্থান পতনের আবহেও এগুলি কম প্রভাবিত হয়। মেটাল এবং ক্যাপিটাল গুডসের মতো গ্লোবাল সাপ্লাই চেনের সঙ্গে যুক্ত সেক্টরগুলি থেকে সাবধান থাকা প্রয়োজন। এদিকে, সোনার সাথে সংযুক্ত ETF বা ডিফেন্সিভ ইনভেস্টমেন্টে অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। বাজারে যদি সামান্য সংশোধন হয়, তাহলে লং টার্মে ভালো শেয়ারে বিনিয়োগের সুযোগ থাকতে পারে। ভারত-মার্কিন (America-India) ট্রেড ডিলের ফলাফল শেয়ার বাজার এবং নির্দিষ্ট সেক্টরের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। চুক্তিটি সফল হলে, IT থেকে শুরু করে ওষুধ এবং টেক্সটাইলের মতো সেক্টরগুলি ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। কিন্তু, ব্যর্থতার ক্ষেত্রে, অস্থিরতা বাড়তে পারে।