বাংলা হান্ট ডেস্ক: সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। সেই রেশ বজায় রেখেই জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলও সামনে এসেছে। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পড়ুয়াদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ পাশ করেছে। তবে, তাদের মধ্যে ইনশা মুশতাক সবার থেকে ব্যতিক্রম হয়ে রয়েছেন। পাশাপাশি, তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি জানলে রীতিমতো অবাক হয়ে যাবেন সবাই।
এই কাহিনি বলতে হলে আমাদের ২০১৬-তে ফিরে যেতে হবে। তার আগে জানিয়ে রাখি যে, ইনশা দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছে তিনি ৩১৯ নম্বর পেয়েছেন। এবার শুরু করি মূল প্রসঙ্গ। সালটা ২০১৬। এটি সেই সময় যখন হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার বুরহান ওয়ানি খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল।
এদিকে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ক্রমাগত বুরহানকে ধরার চেষ্টা করছিল। এমতাবস্থায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় বুরহান লাগাতার বিচ্ছিন্নতাবাদ ছড়াতে থাকে। ঠিক সেই সময়ে বুরহান অনন্তনাগের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে লুকিয়ে আছে বলে খবর আসে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাকে খুঁজে পায় এবং বুরহান ওয়ানি ২০১৬ সালের ৮ জুলাই একটি এনকাউন্টারে নিহত হয়। এদিকে, বুরহান নিহত হওয়ার সাথে সাথে পুরো উপত্যকায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এমনকি, লোকজন রাস্তায় নেমে পাথর ছুঁড়তে থাকে।
জবাবে সেনাবাহিনী প্যালেট গান ব্যবহার করে। এবার আসি ইনশার সাথে এই ঘটনার সম্পর্ক ঠিক কোথায় সেই প্রসঙ্গে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ১১ জুলাই সকালে সেডো এলাকায় নিজের বাড়িতে ছিলেন ইনশা। জানা গিয়েছে ওই প্রতিবাদের বিষয়টি দেখার জন্য তিনি বাড়ির জানালা খুলেছিলেন এবং তখনই তাঁর চোখে গুলি লাগে। সেই কারণে তাঁর দৃষ্টিশক্তি চলে যায়।
এদিকে, তখন জম্মু ও কাশ্মীরে বিজেপি ও পিডিপির জোট সরকার চলছিল। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ইনশার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এমনকি, চিকিৎসকেরা অনেক চেষ্টা করলেও তাঁর দৃষ্টি ফেরেনি। এই প্রসঙ্গে আউটলুকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেহবুবা ইনশাকে একটি চোখ দান করার কথাও বলেছিলেন।
তবে, ভাগ্যের এই নির্মম পরিহাসের সম্মুখীন হয়েও হাল ছাড়েন নি ইনশা। বরং, তিনি নিরন্তর কঠোর পরিশ্রম করে সমস্ত প্ৰতিবন্ধকতাকে জয় করে পড়াশোনা চালিয়ে যান। দ্বাদশ শ্রেণিতে পাশ করার পর ইটিভি ইন্ডিয়াকে ইনশা জানান, “আমি রেজাল্ট জেনে প্রথমে কাঁদতে শুরু করি। তারপর খুব খুশি হই। আমার বাবা-মা আমাকে বলেছিলেন যে যারা দেখতে পায় তারা এত নম্বর পায়নি, যতটা আমি পেয়েছি। নবীনদের জন্য আমার একটাই বার্তা রয়েছে। তাদের যেকোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে দিন। এটাই করুন।”
পাশাপাশি, ইনশা আরও জানান, এরপর তিনি গ্র্যাজুয়েশন করতে চান। আপাতত সেদিকেই লক্ষ্য রয়েছে তাঁর। এছাড়াও, ইনশার বাবা মুশতাক আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি তাঁর মেয়েকে আইএএস অফিসার হিসেবে দেখতে চান।