বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির জেরে রীতিমতো তোলপাড় সারা রাজ্য। প্রায় প্রতিদিনই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে এই সংক্রান্ত মামলায়। এমনকি, নিয়োগ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠে রাজপথে ক্রমাগত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন যোগ্য প্রার্থীরা। আর এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে গিয়েই পরিচয় হয়েছিল তাঁদের। ধীরে ধীরে সেই পরিচয় পৌঁছে যায় প্রেমের সম্পর্কে। আর সেই প্রেমকেই এবার পূর্ণতা দিলেন নদীয়ার (Nadia) চাপড়ার বাসিন্দা মিঠুন বিশ্বাস এবং পূর্ব মেদিনীপুরের (Purba Medinipur) হলদিয়ার বাসিন্দা খুকুমণি দোলই।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, সঠিক চাকরির দাবিতে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে পথে নেমেছিলেন তাঁরা দু’জনেই। আর সেখানেই আলাপ হয় মিঠুন-খুকুমণির। এদিকে, ২০২১-এর প্রথম দিকে মেয়ো রোড থেকে ওই আন্দোলনের স্থান পরিবর্তন হয়ে তা পৌঁছে যায় সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের ৫ নম্বর গেটের অস্থায়ী মঞ্চে। সেখানেও সামিল ছিলেন তাঁরা।
যোগ্য প্রার্থী হয়েও ন্যায্য চাকরির দাবিতে দু’জনে প্রতিবাদের লড়াই লড়তে গিয়ে নিজেদের মধ্যে বহু মিল খুঁজে পান। পাশাপাশি, ওই মঞ্চ থেকেই তাঁরা ভাগ করে নেন নিজেদের সুখ-দুঃখ এবং পরিবারের কথা। এদিকে, সেন্ট্রাল পার্ক থেকে আন্দোলন পৌঁছে যায় মেয়ো রোডের প্রান্তে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। মিঠুন-খুকুমণি উপস্থিত হন সেখানেও।
এমতাবস্থায়, প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পরেই তাঁরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্তে সম্মতি জানান দু’জনেরই পরিবার। যার ফলে চলতি বছরের অগাস্ট মাসে চার হাত এক করে ফেলেন তাঁরা। তবে, প্রতিবাদের মঞ্চ থেকে স্বামী-স্ত্রী হয়ে গেলেও নিজেদের দাবি থেকে সরে যান নি তাঁরা। বরং, এখনও মিঠুন-খুকুমণি প্রত্যক্ষভাবে যোগদান করছেন আন্দোলন-ধর্ণা-মিছিলগুলিতে। এই প্রসঙ্গে মিঠুন জানিয়েছেন, দু’জনেই বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বেকার থাকায় প্রাইভেট টিউশনি করে কিছু রোজগার করেন। আর সেই টাকাতেই আসে হাতখরচ। যদিও, দীর্ঘদিন যাবৎ এই প্রতিবাদ কর্মসূচি চলার কারণে টিউশনিগুলিও যেতে বসেছে। তবে, হাজারও দুঃখকষ্টেও একে অপরের সঙ্গ ছাড়েন নি তাঁরা।
পাশাপাশি, মিঠুন আরও জানিয়েছেন, ‘‘একটা সময়ে আমাদের জীবনে হতাশা চলে এসেছিল। বারবার মনে হচ্ছিল দু’জনে শিক্ষিত হয়েও কেবলমাত্র দুর্নীতির কারণে আমাদের চাকরি হয়নি। তবে, আমার এবং খুকুমণির দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে, চাকরি এক দিন আমাদের হবেই। ২০১৯ সালে SSC-র নিয়োগ নিয়ে যে দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছিল, ২০২১-এর মধ্যে সেই দুর্নীতির প্রচুর প্রমাণ সামনে এসেছে। এখন আদালতও বলছে, আন্দোলনকারীদের দাবি ন্যায্য। তাই, আমরা বিশ্বাস করি যে এক দিন আমরা চাকরি পাবই।” আর এই বিশ্বাসকে সম্বল করেই তাঁরা সংসার সামলেই সম্মিলিতভাবে সোচ্চার হয়েছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে।