বাংলাহান্ট ডেস্ক: পাকিস্তানের পেশাওয়ারে একটি বড়সড় সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে গতকাল। একটি মসজিদের ভিতর এই আত্মঘাতী হামলায় নিহত ৬০-এরও বেশি মানুষ। একইসঙ্গে ১৫০-রও বেশি মানুষ আহত। বিস্ফোরণের সময় মসজিদে প্রায় ৩০০-৪০০ মানুষ ছিলেন। বিস্ফোরণের তীব্রতায় মসজিদের ছাদ অবধি ধসে যায়। প্রাথমিক ভাবে এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল তেহরিক-এ-তালিবান (Tehrik-e-Taliban) বা পাকিস্তানি তালিবানের কমান্ডার সর্বকফ মহম্মদ। যদিও পরে টিটিপি মুখপাত্র মহম্মদ খুরাসানির থেকে দূরত্ব বজায় রাখে সে। কারণ খুরাসানি জানিয়েছিল, মসজিদ, ধর্মস্থান ও সম্মেলনে হামলা চালানো আমাদের নীতি নয়।
এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করে দিল, পাকিস্তান সত্যিই সন্ত্রাসের আঁতুরঘর। বিগত কয়েক দশকে বেশিরভাগ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বিশ্ব জুড়ে পাকিস্তান মারফত সন্ত্রাস ছড়িয়েছে। আমেরিকায় হামলা চালানোর পর আল কায়েদার মুখ্য নেতা ওসামা বিন লাদেনও পাকিস্তানের আবোটাবাদে লুকিয়ে ছিল। এছাড়াও একাধিক সন্ত্রাসবাদীকে আশ্রয় দিয়েছে এই দেশ। পাকিস্তানে বসেই এই সংগঠনগুলি দুনিয়া জুড়ে তাদের কার্যকলাপ চালাচ্ছে। তবে বিগত কয়েক বছরে পাকিস্তান নিজেও এর ফল ভোগ করছে। সেখানে সাধারণ মানুষের উপরেও সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে।
হিলারি ক্লিন্টন একবার বলেছিলেন, “বাড়িতে সাপ পুষলে সে একদিন আপনাকে কামড়াবেই।” আজ তাঁরই কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছে পাকিস্তানের জন্য। চলতি মাসের শুরুতে পাকিস্তানি তালিবান দাবি করে, দু’জন আইএসআই এজেন্টকে হত্যা করেছে তারা। নিহতদের একজন আবার সন্ত্রাস বিরোধী শাখার ডিরেক্টর ছিলেন। রবিবার পাক সেনা জানায়, ওই দু’জন আধিকারিকের হত্যাকারীকে আফগানিস্তান সীমান্তে মেরে ফেলা হয়েছে। উল্লেখ্য, টিটিপিকে তালিবানেরই সঙ্গী বলা হয়। পাকিস্তানের মতে, আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানেও টিটিপি-র হামলা বেড়েছে।
গত ১৫ বছর ধরে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে টিটিপি। দক্ষিণ এশিয়া সন্ত্রাস পোর্টাল অনুযায়ী, গত ২২ বছরে পাকিস্তানে ১৫ হাজার ৯৯৭টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এই হামলাগুলিতে মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৯১৮ জন মানুষের। শুধু ২০২২ সালেই সেখানে ৩৬৫টি হামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২২৯ জন সাধারণ মানুষ ও ৩৭৯ জন সেনা নিহত হয়েছেন। বিগত ২২ বছরের তথ্য দেখলে জানা যায়, প্রতিদিন ৪ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাস হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন।
এর আগে ২০২১ সালে ২৬৭টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল পাকিস্তানে। এর মধ্যে ২১৪ জন সাধারণ মানুষ ও ২২৬ জন সেনা মারা যান। এমনকী এ বছরের ২৯ জানুয়ারি অবধিও ৩০টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে পাকিস্তানে। সন্ত্রাসের পাঠশালা পাকিস্তান এখন নিজেদের জ্বালানো আগুনের আঁচেই পুড়ছে। গতকালের পেশাওয়ারের মসজিদ হামলা এ বছরের দ্বিতীয় বড় হামলা। এর আগে ২০১৪ সালে পেশাওয়ারের একটি স্কুলে হামলা চালানো হয়েছি। সেখানে ১৫০ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১৩০ জন শিশু ছিল। সামরিক বাহিনীর পোশাকে ওই সেনা স্কুলে ঢোকে সন্ত্রাসবাদীরা। এরপরেই এলোপাথারি গুলি চালাতে থাকে তারা। পাক সেনার হাতে ৬ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়। সেই হামলারও দায়ভার নেয় টিটিপি।