বাংলাহান্ট ডেস্ক: গত দুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে। দূর্গাপুজোর নবমীর দিন ওপার বাংলার কুমিল্লাতে মণ্ডপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে দূর্গাপ্রতিমা। এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনার ঢেউ উঠেছে নেটপাড়ায়। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাঁচানোর দাবিতেও সরব হয়েছেন অনেকে। এবার বিষয়টা নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (parambrata chatterjee)।
ফেসবুকে একটি বড়সড় পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে কয়েক জায়গায় দূর্গা পুজোর মন্ডপে ইসলামি মৌলবাদীদের তান্ডব নিয়ে কিছু পোস্ট নবমীর দিন সকাল থেকে চোখ পড়লো | সেই প্রসঙ্গে দু চার কথা … আমাকে যে ছেলেটি শুটে এটেন্ড করে , আমার স্পট বয় , তার নাম নাসির গাজী | পুজোর পাঁচটা দিন নিয়ম করে আমাকে শোক থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেছে | শুভ ষষ্ঠী থেকে বিজয়া ! প্রতি বারই জানায় |
সরস্বতী পুজোর দিন ক্ষণ আমার না থাকলেও ওর মনে থাকে এবং মনে করিয়েও দেয় | বাইরে শুট করতে গিয়ে কোনো দর্শনীয় মন্দিরের সন্ধান পেলে সেটাও নাসির ই আমাকে এনে দেয় | নবমীর দিনই সকালে আমার কাঠের মিস্তিরি সানোয়ার আলী ফোন করেছিলেন একটা কাজের কথা বলতে | ফোনালাপ শুরুই করলেন “শুভ নবমী দাদা ” বলে …
আমার কিছু না হোক দশ জন বাংলাদেশি বন্ধু দের দেখলাম পুজো মণ্ডপে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়া তে দিয়েছন | এরা সবাই ধর্মে মুসলমান | বাংলাদেশে এবং এই বাংলায় এরকম অজস্র পুজো আছে যেগুলির কমিটি তে গুরুত্বপূর্ণ পদে মুসলমান রা আছেন | কথা গুলো বলছি কারণ বাংলাদেশে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা তুলে ধরে , বিদ্বেষ সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে এটা বলতে থাকাটা উস্কানি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয় | এই ঘটনা গুলি থেকে যদি প্রমান হয় যে বাংলাদেশে হিন্দু রা বিপন্ন , তাহলে ভারতে গত সাত বছরে এরকম অগুনতি ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে (এবং যেগুলি নিয়ে দেশনেতারা অভূতপূর্ব ভাবে চুপ থেকেছেন !) যেগুলি থেকে আরও সহজে প্রমান হয় যে ভারতে মুসলমান রা বিপন্ন !
আমি বরং বলবো, বড়ো পরিসরে, এতো সত্ত্বেও মানুষের ভিতরে সদ্ভাব সম্প্রীতি আছে | কিন্তু কিছু কম মিষ্টি কথাও এই সুযোগে বলে রাখা দরকার । গোঁড়ামি , মৌলবাদ , ইংরিজি তে যাকে বলে ফানাটিসিজম , সেটা সব ধর্মেই থাকে , থেকে এসেছে হাজার বছর ধরে | যখন যে ধর্মের মৌলবাদী জিগির সামনে আসে , তখন সেগুলোর থেকে বেরোনোর , সেগুলির সমালোচনা করার বা সেই বিস্বাসে বিশ্বাসী শক্তি গুলি কে পরাস্ত করার দায়িত্ত্ব কিন্তু সেই ধর্মের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকেই আরো বেশি করে নিতে হবে !
বাংলাদেশে আমার সমস্ত বন্ধুদের কাছে তাই আমার একান্ত অনুরোধ , কুমিল্লা বা নোয়াখালী তে ঘটে যাওয়া ঘটনার তীব্র নিন্দা করুন কোনো দ্বিধা না রেখে , দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করুন | আপনাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে তার বক্তব্যের মাধ্যমে সুবার্তা দিয়েছেন , আপনারাও সেই মৌলবাদ বিরোধী সুর বজায় রাখুন |
প্রতি বছরই প্রায় এরকম কিছু না কিছু ঘটে , সত্যি বলছি ভালো লাগে না | প্রাণের উৎসবের উপর আক্রমণ বলে ভালো লাগে না তো বটেই , তাছাড়াও আরো বড়ো একটা কারণ হলো, এই ঘটনা গুলি সীমানার এই পারে গোঁড়া হিন্দুত্ত্ববাদীদের বড়ো সুবিধে করে দেয় | তাদের আস্ফালন বাড়ে , ধর্মের জিগির তুলে , এই উদাহরণ টেনে , মানুষের মনে অন্য সম্প্রদায় সম্বন্ধে ঘেন্না জন্মিয়ে রাজনৈতিক মুনাফা তোলার পথ মসৃন হয় |
আমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের ধর্মের অতিরিক্ততার বিরুদ্ধে কথা বলা আরম্ভ করি | ধর্ম মানে বিশ্বাস , কিছু মানুষের এক সঙ্গে হওয়া , অনেক বছর ধরে চলে আসা কিছু আচার, কিংবা সমাজ কে এক রকম ভাবে সংঘবদ্ধ রাখার জন্যে তৈরী করা কিছু নিয়ম , বা হয়তো নানান উৎসব ! যেটাই হোক , বিশ্বাস আর অতি বা অন্ধ বিশ্বাস (যা অন্য মানুষ কে জোর করে, বা ক্ষতি করে ) এর মধ্যে সূক্ষ্ম লাইন টা কোথায় সেটা আমাদেরই বুঝে নিতে হবে !’
ঘটনার কড়া নিন্দা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার, দেশও সবার। ওদেশের হিন্দুদের তিনি আবেদন করেছেন নিজেদের সংখ্যালঘু না ভাবতে। ওদেশে তাদেরও বসবাস করার, নিজ উৎসব পালন করার সমান অধিকার আছে।