বাংলাহান্ট ডেস্ক: শিল্পপতি রতন টাটার মতোই ভারতীয় কর্পোরেট জগতে একজন আলাদা সাফল্যের (Success Story) উচ্চতায় দাঁড়িয়ে ছিলেন শ্রীরাম গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রামমূর্তি ত্যাগরাজন। তাঁর সরল, নিরহংকারী জীবনদর্শন এবং মূল্যবোধ-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবসায়িক সাফল্যকে সমাজসেবার সাথে জড়িত করেছিল। তাঁর দর্শন ছিল, বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধনের পথে জাঁকজমক বা আত্মপ্রচার অপ্রয়োজনীয়, যা তাঁর প্রতিটি ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হতো।
রামমূর্তি ত্যাগরাজনের অনন্য সাফল্যের কাহিনি (Success Story):
মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ১৯৭৯ সালে এভিএস রাজা ও টি. জয়রামনের সঙ্গে তিনি শ্রীরাম চিটস প্রতিষ্ঠা করেন। এর লক্ষ্য ছিল ট্রাক চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং নিম্ন আয়ের পরিবারের মতো সেইসব মানুষকে ঋণ সুবিধা দেওয়া যারা প্রচলিত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার বাইরে থাকেন। এই মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গিই ধীরে ধীরে একটি বিশাল কোম্পানি শ্রীরাম গ্রুপে পরিণত হয়, যা আজ দেশব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাতিল হল শিক্ষকদের ছুটি! SIR-র প্রক্রিয়ায় রবিবারেও খোলা স্কুল? জারি নির্দেশিকা
ব্যবসার শীর্ষে থেকেও তাঁর কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ছিল সমাজসেবা। একপর্যায়ে নিজের শেয়ার বিক্রি করে পাওয়া প্রায় ৬,২১০ কোটি টাকার সমস্ত অর্থই তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কল্যাণমূলক কাজের জন্য একটি ট্রাস্টে দান করেন। এই অসাধারণ সিদ্ধান্ত তাঁকে ভারতের অন্যতম মহৎ শিল্পপতি এবং কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার এক জীবন্ত প্রতীকে পরিণত করে।
তাঁর হাতে গড়া শ্রীরাম ফাইন্যান্স আজ দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থপ্রতিষ্ঠান। সংস্থার বাজার মূলধন প্রায় ১.৬৯ লক্ষ কোটি টাকা। সম্প্রতি সংস্থাটির বোর্ড জাপানের MUFG ব্যাঙ্কের কাছে ২০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির অনুমতি দিয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৩৯,৬১৮ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগ শ্রীরাম ফাইন্যান্সের বিশ্বাসযোগ্যতা ও আন্তর্জাতিক বৃদ্ধির সম্ভাবনাকেই নির্দেশ করে।

আরও পড়ুন:২,৪৩৪ কোটি টাকা! কীভাবে বিরাট প্রতারণার সম্মুখীন হল Punjab National Bank?
তামিলনাড়ুর কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া ত্যাগরাজন চেন্নাই ও কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেন। নিউ ইন্ডিয়া অ্যাসিউরেন্সে প্রায় দুই দশকের কর্মজীবনের পর তিনি শ্রীরাম প্রতিষ্ঠা করেন। আজ এই গ্রুপের দেশজুড়ে ৩,৬০০-র বেশি শাখা, ৭০,০০০ কর্মী এবং ১ কোটি ১০ লক্ষেরও বেশি গ্রাহক রয়েছে। রামমূর্তি ত্যাগরাজনের জীবন প্রমাণ করে যে সততা, সরলতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে ব্যবসা করেও একটি অটল সাম্রাজ্য গড়ে তোলা সম্ভব।












